মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন আবরার ফাহাদ

৩ মার্চ, ২০২৫  
৩ মার্চ, ২০২৫  
মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন আবরার ফাহাদ

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্মম পিটুনিতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন।

ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, 'অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসিকতার প্রতীক, মুক্ত চিন্তার এক প্রতিচ্ছবি-আবরার ফাহাদ। মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫-এ ভূষিত হওয়া তার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি। তার আদর্শ আমাদের আলোকিত করে, ন্যয়বিচারের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেয়। জাতি তোমাকে ভুলবে না, আবরার!'

এর আগে রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, যারা বাংলাদেশের জন্য জীবনব্যাপী অবদান রেখেছেন এবং নতুন কিছু তৈরি করেছেন যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। সেটি যেকোনো ক্ষেত্রে—সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান বা সমাজসেবার ক্ষেত্রে নতুন ধারা, যেটি এখনো সারা দেশকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আগে তাদের সেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে নাম চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে গতকাল ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, এটি সুপারিশ।

জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি গতকাল বলেছিলেন, ‘আপনারা একুশে পদক দেখে খুশি হয়েছিলেন, এ পুরস্কার (স্বাধীনতা পদক) দেখে আপনারা আরও খুশি হবেন।’ এবার ১০ জনের কম মানুষকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে গতকাল জানান আইন উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা এই স্বাধীনতা পুরষ্কার। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপর আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ, এখন যেকোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে। তবে এরই মধ্যে কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছে বলে গত সপ্তাহে প্রকাশ হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সে ৫ আগষ্ট পালিয়েছে।