কিভাবে আসছে স্টারলিংক, রেভিনিউ শেয়ারের কি হবে?

দেশের টেলিকম খাতে ফের ঝড় উঠেছে স্টারলিংক নিয়ে। বিগত সরকারের শেষ সময় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম থেকেই নানা ফরম্যাটে আলোচনায় থেকেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে দেয়া ইন্টারনেট সেবা। বিদেশী কোম্পানি হিসেবে সেবাটি প্রদানের পদ্ধতি, মূল্য সংবেদনশীলতা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা, তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তার ঝুঁকি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি-তে এ নিয়ে একটি কমিশন বৈঠক হওয়ার কথা উঠেছে।
তবে এর আগেই সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ্ক বৈঠকে জোর প্রশ্ন উঠেছে- কোন ফরম্যাটে বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংক? আকাশ থেকে ইন্টারনেট দিয়ে কি স্টারলিংক সরকারের সঙ্গে রেভিনিউ ভাগাভাগ করবে? কিংবা আকাশে থাকা এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেটকে কতটা নাগালে পাবে সরকার?
এসব প্রশ্নের জবাবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তি ইলন মাস্কের স্টারলিংকের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী।
তিনি বলেছেন, নন্-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট গাইডলাইন অনুযায়ী চলবে। এজন্য আমাদের যথেষ্ট সময় রয়েছে। এজন্য আমি ইতিমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। এ নিয়ে মতামত দিতে আগেই এনজিএসও গাইডলাইন নিয়ে মতামত দিতে সবার জন্য খসড়াচি উন্মুক্ত রেখেছিলাম। এরপরই সরকার এ নিয়ে একটি খসড়া করেছে। সেখানে ছোট কিছু সংশোধনী দিয়েছে। সংশোধন সহ সেটি নিয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) এ নিয়ে একটি কমিশন বৈঠক আছে।
স্টারলিংক-কেও কি সরকারের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ার করতে হবে কি না প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, এটা এখনো মডেল অবস্থায় আছে। সরকারকে গাইডলাইনটি অনুমোদিত হতে দেন তারপরই বলা যাবে।
এই ইস্যুতে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, স্টার্লিং স্যাটেলাইট কে এসওএফ এবং রেভিনিউ শেয়ারিং থেকে এখনো কেন বাইরে রাখা হয়েছে? আমাদের প্রান্তিক আইএসপি উদ্যোক্তারা যদি রেভিনিউ শেয়ারিং এবং এস ও এফ দিতে পারে, তাহলে স্টার লিংক কেন নয়?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর বলেন, আমি বলবো সবার জন্যই রেভিনিউ শেয়ারিং উঠিয়ে দেওয়া হোক। উন্মুক্ত ইন্টারনেট দুনিয়ায় রেভিনিউ শেয়ারিং কেন হবে বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্ককে পাঠানো আনুষ্ঠানিক চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার বিষয়ে আগ্রহের কথা উল্লেখ। প্রধান উপদেষ্টা তাকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ এবং আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।
সবশেষ গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইলন মাস্ককে পাঠানো চিঠিতে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, ‘আসুন, একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমরা একসাথে কাজ করি। আপনার (ইলন মাস্ক) বাংলাদেশ সফর দেশের তরুণ-তরুণীদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেবে, যারা এই অগ্রণী প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হবে।’
চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অবকাঠামোর সাথে স্টারলিংকের সংযোগ যুক্ত করা হলে বিশেষ করে দেশের উদ্যমী যুবসমাজ, গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারী এবং প্রত্যন্ত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য তা বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে।’