একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র’র ৪ কারিগরই

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  
একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র’র ৪ কারিগরই

চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ইউনিকোডে বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড এর উদ্ভাবক মেহেদী হাসান খান। তবে ওপেন সোর্স হিসেবে এই সফটওয়্যারটির উন্নয়নে ধাপে ধাপে চেনা-অচেনা অনেকেরই অংশীদারিত্ব আছে জানিয়ে একক ভাবে এই কৃতিত্ব না নিয়ে এটিকে দলীয় অর্জন হিসেবে দেখছেন পেশায় চিকিৎসক এই সফটওয়্যার প্রোগ্রামার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্যাটাগরিতে তার সঙ্গে আরও তিন কারিগরকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এর হলেন- রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তাফা।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নিজের অভ্র কিবোর্ড বাংলাসফটওয়্যার ফেসবুক পেজে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনেকদিন ধরে বন্ধ উল্লেখ করে এক পোস্টে মেহেদী হাসান খান লিখেছেন, ‘ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় একটু পরিচিতি পেয়ে যাওয়ার সুবিধা অসুবিধা দুইটাই আছে। বিড়ম্বনার কথা আজকে না বলি। সুবিধার একটা হলো প্রয়োজনে ডাকলে সঙ্গে থাকার মানুষ পাওয়া যায়। পরিচিতি পাওয়ার আগে এরকম সঙ্গে থাকার মানুষ পাওয়া কঠিন, কাজের মানুষ পাওয়া আরও কঠিন।’

তিনি লিখেছেন, ‘২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনতো না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনো নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করলো অনলাইন ফোরামে, তারা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি, অথবা bug থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দেই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চেনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়া শুরু করলো। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সঙ্গে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোনো কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই তাদের।’

মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসঙ্গে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এরকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গেছেন নানান কারণে, কিন্তু কোনো কারণে হাতেগোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের ওপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসঙ্গে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে খুশি করতে পারবো না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

অভ্র কিবোর্ডের উদ্ভাবকদের অন্যতম এই সদস্য বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্রর কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করেছি- রিফাত, সিয়াম, শাবাব, এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারবো না। উনি মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। ওনাদের কথা ছিল- পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ, তারা তাই করেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সঙ্গে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক।’

তিনি আরও লিকেছেন, ‘একা একা তো বেশিদূর যাওয়া যায় না। ভালো হলো শেষমেশ। ওনারা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো। পদক তো একটা প্রতীক বা উপলক্ষ, এই উপলক্ষে সবার একসঙ্গে হওয়া হবে আবার। `Maybe the real treasure was the friends we made along the way’ (ক্লিশে, জানি আমি। করলাম ক্লিশে, আমার ইচ্ছা!)।’