তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান আইসিটি সচিবের; জানালেন, পে-পাল চালুর উদ্যোগের কথা

উদ্ভাবন ও উদ্যোগকে একীভূত করে তরুণপ্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। এছাড়াও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্রিল্যান্সরদের অর্থ সহজে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে পে-পাল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও জানিয়েছেন সচিব।
তিনি বলেছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মরা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা আয় করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্রিল্যান্সরদের অর্থ সহজে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে পে-পাল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু উপযুক্ত চ্যানেল না থাকার কারণে তারা সহজভাবে তাদের উপার্জিত অর্থ আনতে পারছে না। একই সাথে তিনি আগামী বাজেটে তথ্য প্রযুক্তি খাতের আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনার আশ্বাস দেন।
সচিব আরো বলেছেন, কেউ যদি মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে চাকরি শুরু করে তাহলে শুধু সে একজনই প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু যখন সে উদ্যোক্তা হয়ে কোন একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবে সেখানে আরো ২০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চিটাগং আইটি প্রফেশনাল (এসসিআইটিপি)’র যৌথ আয়োজনে ষষ্ঠ চট্টগ্রাম আইটি ফেয়ার-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, আমাদের দেশে সম্ভাবনার অভাব নেই। এখানে একাডেমি থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রি, স্টার্টআপ, আইটি ইনকিউবেটর, ফ্রিল্যান্স সেক্টর সবই রেডি। এসব খাতকে কাজে লাগাতে হবে। ফ্রি-ল্যান্স করে যারা আয় করে তাদের আয়কে আরো নিরাপদ এবং সহজলভ্য করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেপালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে তরুণ সমাজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভাবনী কাজে আরো বেশি উৎসাহিত হবে।
তিনি আরো বলেন, একটা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে ইন্ডাস্ট্রি। ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে প্রাইভেট সেক্টরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতে হবে। মেধাবীদের সেক্টরভিত্তিক কাজে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আইসিটি ডিভিশন নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ শিক্ষার্থীদের কাজ করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধশালী করা যাবে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা’র সভাপতিত্বে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বক্তৃতা করেন।
এছাড়াও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, সোসাইটি অব আইটি প্রফেশনালস’র সভাপতি আবদুল্লাহ ফরিদ, মেলার সিলভার স্পন্সর সফোজ’র কান্ট্রি ম্যানেজার এ এইচ এম মহসিন ও টেকনোলজি পার্টনার লিংক থ্রি’র ফয়সাল বিন আমিন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী, আইটি প্রফেশনালস ও প্রশিক্ষণার্থীসহ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীন বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা দিন দিন উন্নতি করছি। কিন্তু এ খাতে এখনও মাতৃভাষার বাংলা ব্যবহার এখনও পিছিয়ে রয়েছি। তাই এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞদের কাজ করা উচিত। তিনি বলেন-পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে আমাদেরকে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। আমাদের জেন জি-রা প্রযুক্তি খাতে অনেক দক্ষ। তাদের এই দক্ষতা কিভাবে আরও শাণিত করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানই তথ্য প্রযুক্তি খাতের। শুধুমাত্র আউট সোর্সিং এ বিশ্বব্যাপী বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। তাই তথ্য প্রযুক্তির এই জয়যাত্রায় আমাদের সঙ্গী হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন-ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের টেকনোলজি সম্পর্কে যেমন জানতে হবে, তেমনি প্রযুক্তি ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিত্য নতুন ইনোভেশন পৌছে দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি বিকাশে চট্টগ্রাম চেম্বার অত্র অঞ্চল ও দেশের ব্যবসায়িক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে যোগসূত্র স্থাপনের লক্ষ্যে নিয়মিত আইটি ফেয়ার আয়োজন করে আসছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে শিল্পায়নের বিকাশে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল ও বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল যেমন রয়েছে তেমনি আইটি পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টারও রয়েছে। দেশের যুব সমাজকে প্রযুক্তি খাতে দক্ষ ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এসকল সেন্টারের কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করতে আইসিটি বিভাগের সচিব এর প্রতি অনুরোধ জানান।
এসসিআইটিপি’র সভাপতি আবদুল্লাহ ফরিদ বলেন, মেলায় শুধু পণ্য প্রদর্শন নয়। মেলাকে কার্যকরী ও আউটপুট আনতে একাডেমিয়া ইন্ডাষ্ট্রি সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি সকল শ্রেণি ও পেশাজীবীদের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইটি ফেয়ার পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
এ আইটি ফেয়ার চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় ভারত চীন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইটি ও সল্যুশন দেয়া প্রতিষ্ঠান মিলে দেশী-বিদেশী প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৬০টির মতো স্টল স্থান পেয়েছে।