যে কারণে টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক, প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা

২৮ জুন, ২০২৫  
২৮ জুন, ২০২৫  
যে কারণে টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক, প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা

প্রস্তাবিত খসড়া টেলিকম নীতিমালাকে ২৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নীতিিগত সঙ্কট সৃষ্টি ও আত্ম বিরোধী বলে মনে করে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। এ কারণেই টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক, প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হাকিম। 

তিনি বলেছেন, কম মূল্যে সবচেয়ে ভালো ইন্টারনেট সেবা দেয়া বাস্তব সম্মত নয়। এটা সস্তা রাজনীতির পর্যায়ে পড়েছে। সরকার ছাড় না দিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমাতে পারবে না। 

তিনি বলেছেন, সরকার আইএসপি থেকে ৬০ শতাংশ রাজস্ব নেয় সেই জায়গা থেকে সাশ্রয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা সরকার ছাড় দিতে চায় না, কিন্তু আমাদের কাছে চায়। এটা কিভাবে সম্ভব। তারপরও আমরা কম দামে ভালো ইন্টারনেট সেবা দিতে চাই। এ জন্য একটি ভালো পলিসি দরকার।  

এরপরও বিটিআরসি ৪০০ টাকায় ইন্টারনেটের দাম নামিয়ে আনতে বাধ্য করা হলেও এর দায় ব্যবসায়ীরা নিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন এই ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নেতা।

২৮ জুন, শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন আইএসপিএবি সভাপতি। 

 প্রস্তাবিত খসড়া টেলিকম নীতিমালা; আইএসপি শিল্পের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক কর্মশালায় বিটিআরসি’র ভেতরেও মোবাইল অপাররেটররা আইএসপিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রোপগাণ্ডা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম।

তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত খসড়া টেলিকম নীতিমালায় দেশীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা নেই। বরং বিদেশী কোম্পানির স্বার্থ সুরক্ষা হবে। টেলিকম খাতের প্রতিটি লাইসেন্সই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। 

টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে এর সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। তারা জানান, দেশী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা এবং গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোত্তম সেবা দিতেই এই কর্মশালায় করণীয় নিয়ে এই খাতের সবার সঙ্গে কর্মশালা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার বিষয়টি আমলে নিয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই দেশের স্বার্থে করণীয় নিয়ে সরকারকে বাস্তবত সম্মত পলিসি তৈরিতে সহায়ক প্রতিবেদন দেবে টিআরএনবি। 

টিআরএনবি সভাপতি বলেন, ইতিমধ্যেই ক্যাবল টেনে স্টারলিংক সেবা কোন নীতিমালার অংশ এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সরাসরি উত্তর না দিয়ে জানিয়েছেন এখানে প্রতিযোগিতা সৃষ্টিত শিগগিরিই ফ্রান্সের আরেকটি কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দেশে আনা হচ্ছে।  

কর্মশালায় আইএসপি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেছেন, অ্যাক্টিভ শেয়ারিংয়ের অভাবে দেশের প্রচুর অর্থের অপচয় কমাতে এরই মধ্যে আমরা ১ জিবিপিএস কমন রাস্তা করে ধানমন্ডিতে ৭৭টি আইএসপি একসঙ্গে উচ্চগরি সিমলেস সেবা দিয়ে নজির স্থাপন করেছে।

বক্তব্যে সরকারকে ঘন ঘন নীতিমালা পরিবর্তন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান সাবেক সভাপতি ইমদাদুল হক।

আইএসপি’র চ্যালেঞ্জ বিষয়ে এই খাতের খরচের খাত তুলে ধরে ইন্টারনেট সেবাদাতা মোবারক হোসেন দেখান, আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো একজন গ্রাহককে ৫০০ টাকায় যে ইন্টারনেট সেবা দেয় তার মধ্যে ২০০ টাকাই সরকারের রাজস্ব খাতে চলে যায়। ফলে মোট খরচের ১৮-২০ শতাংশ ট্রান্সমিশন খরচ কমিয়ে সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়টি অবান্তর ও স্বস্তা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। এর পরেও রয়েছে বসুন্ধরা ও নিকেতনের মতো হাউজিং সহ স্থানীয় পর্যায়ের অদৃশ্য  চাঁদা। বিপরীতিতে অটোরিকসার দামে মার্সিডিজ বেঞ্চের সেবা দিতে বলছে বিটিআরসি। অথচ তাদেরকে এসওএফ ফান্ড থেকে কোনো সহায়তাও করা হয় না। একইসঙ্গে বিদেশী কোম্পানির জন্য বেশি দামে সেবা নেয়ার প্রচারণা চালানো হলেও দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধু কম দামের সেবা নিয়ে বলা হচ্ছে।  যদি অ্যাক্টিভ শেয়ারিং করা হলে ৭০ শতাংশ সুবিধা বাড়বে গ্রাহকের। আর তারের জঞ্জালটা তৈরি করেছে সরকারের পলিসি। পলিসি জট তৈরি করে সরকার আইএসপিদের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টমানের সেবা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করা হয় এই কর্মশালায়।