আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে: আসিফ; আল্লাহর রেফারেন্স দিয়ে হুমকী দিয়েন না: কনক

আসিফের ফেসবুক পোস্টের জবাবে কনকের ইউটিউব লাইভ

১২ জুন, ২০২৫  
১২ জুন, ২০২৫  
আসিফের ফেসবুক পোস্টের জবাবে কনকের ইউটিউব লাইভ

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।  জবাবে সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. কনক সারোয়ার। তিনি বলেছেন, আল্লাহ সবার জন্যই আছেন। আল্লাহর রেফারেন্স দিয়ে আমাদের হুমকী দিয়েন না। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে আল্লাহ রাসুলের নাম বলা অনেক পুরোনো স্টাইল। অপরাধ ঢাকতে বাংলাদেশে এই ধর্মীয় আবরণ অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। 

এর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১১ জুন (বুধবার) রাতে ‘নিন্দা’ শিরোনামে আইনমন্ত্রীর দেওয়া পোস্টটির অভিব্যক্তি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পোস্টের নিচে একের পর এক মিশ্র মন্তব্য পড়তে থাকে। যথারীতি অনলাইন মিডিয়ার খবরে স্থান পায়। 

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ‘মধ্যরাতে ফেসবুকে ক্ষোভের পোস্ট! অকারণেই ‘চেতেছেন’ আইন উপদেষ্টা’ শিরোনামে ইউটিউব লাইভে  ভ্লগ পোস্ট দেন এই উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা করা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. কনক সারোয়ার। সেই ভিডিওতে ড. আসিফ নজরুলের নিন্দা-কে ক্ষোভ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি ।  আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে বক্তব্যের সূত্র ধরেই এই ভিডিও বলে জানান কনক। 

ভিডিওতে সরকারের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির কথা তুলে ধরে কনক সারোয়ার বলেন, যে কোনো আইনি বা অধ্যাদেশ পাশের আগে সেটি নিয়ে ভেটিং করা হয়। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় সংবিধানের সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের কোনো সংঘর্ষ আছে কি না, এটি মৌলিকি অধিকারের পরিপন্থী কি না কিংবা অন্য কোনো আইনকে বাইপাস. ওভারল্যাপ বা ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি না তা দেখা তাদের দায়িত্ব। পারিপার্শ্বিকসহ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এর ওপর মতামত দেয়ার অধিকার রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। এ কারণেই সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন আমি সমালোচনা করি। 

এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ২২ মে সৃষ্ট ড. ইউনূসের পদত্যাগ জটিলতা ২৪ মে ঠিক হওয়ার পরদিন, ২৫ মে এই অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। ইতিমধ্যে এ অধ্যাদেশ নিয়ে সচিবালয়ে কর্মকর্তারা আন্দোলনে ছিলেন। হঠাৎ করে এমন একটি অধ্যাদেশ জারি করে দেশের ১৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষুব্ধ করা হয়। এতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে এসময় এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই বলে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা উচিত ছিলো। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। উপরন্তু এই অধ্যাদেশটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি ৩ জুন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে এই আইনটি কিছু কিছু ক্ষেত্রৈ অপপ্রোয়েগের সুযোগ রয়েছৈ বলে স্বীকারও করেছেন।   

একই ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক অধ্যাদেশ। কনক বলেন, আইন মন্ত্রণালয় এখন এমন আইজইরা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আর আমরা এগুলো বললে- ‘আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে’ বলা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই তার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে কারো ছাড়ানো, কারো গ্রেফতার না করা ইত্যাদি ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। একটি হত্যা মামলা ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যারা অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েছে বিচার বিভাগের সেসব ব্যক্তির প্রমোশন হচ্ছে। এটা তো সম্ভব হওয়ার কথা না। গত ১০ মাসে আপনি (আসিফ নজরুল) একজন অযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। আইনের শিক্ষতকা ও আইন মন্ত্রণালয় চালানো এক জিনিস নয়।  

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে কনক সারোয়ার বলেন, আল্লাহ আমার বিচার করলে আপনাকে বিচার করবে না?

এবার ড. আসিফ নজরুলের সেই পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

নিন্দা
কয়েক দিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন-বিষয়ক ভুল সংবাদের জেরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই ঝড়ের অন্যতম শিকার হয় আমার পরিবারের সদস্যরা। দু-একজন তাদের ধিক্কার দিতে থাকে, কীভাবে এই আইন করলাম আমি! তারা বলে: এটা তো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় করেছে! কিন্তু সমালোচকেরা নাছোড়বান্দা! না, আইনটিতে তো লেখা আছে আইন মন্ত্রণালয়ের নাম।

আমি জানি, এ রকম বহু শিক্ষিত মানুষ আছে সমাজে। তাদের কাছে সবিনয়ে বলি, অন্য যেকোনো মন্ত্রণালয় যে অধ্যাদেশই করুক না কেন, তা জারি করতে হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। আমাদের রুলস অব বিজনেস অনুসারে এটাই বিধান। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে এটাই হয়। বাংলাদেশে এনবিআর নিয়ে যে আইনটা (অধ্যাদেশ) হয়েছে, তা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর এটা জারি করতে হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়কে। সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা নিয়ে যে আইন, তা–ও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু এটা জারি করতে হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়কে।

অধ্যাদেশ আকারে যত আইন অতীতে হয়েছে, সেগুলো আইন মন্ত্রণালয় জারি করেছে। ভবিষ্যতে যেসব অধ্যাদেশ হবে, সেগুলোও আইন মন্ত্রণালয়কে জারি করতে হবে। এ জন্য গেজেটের প্রথম পাতায় আইন মন্ত্রণালয়ের নামই থাকবে। কিন্তু তার মানে এটি নয় যে আইন মন্ত্রণালয় আইনগুলো করেছে বা এটি আইনগুলোর প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়।

আইন মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে আইন করেছে কেবল এ মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে। যেমন দেওয়ানি কার্যবিধির সংশোধনী আইন বা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত আইনটি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। আছে শুধু জারি করার দায়িত্ব। এটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।

২.
আইন তো তবু কিছুটা খটমটে বিষয়। কিন্তু সাদামাটা, সহজবোধ্য যেকোনো বিষয়েও আমাকে নিন্দা করার প্রবণতা আছে সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের যেকোনো কাজের সমালোচনা যদি আমাকে করা হয়, তাহলে যেকোনো ভালো কাজের প্রশংসাও আমাকে কেন করা হয় না?

সাবেক রাষ্ট্রপতি কীভাবে বিদেশে গেলেন, এই দায় যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রব্যমূল্য যে স্থির রয়েছে, এই প্রশংসাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দিতে হবে। কিন্তু এর কোনোটিই আসলে করা ঠিক নয়।

আমার কাজের জন্য নিন্দা/প্রশংসা আমাকে করবেন, অন্যের কাজের জন্য অন্যকে। যেকোনো কাজের সামগ্রিক দায়দায়িত্ব আমাদের গোটা সরকারের। কিন্তু যদি নির্দিষ্টভাবে একজন উপদেষ্টাকে দায়ী করা হয়, তাহলে সেটি শুধু তার মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিষয়ে করা উচিত।

৩.
যারা নিন্দা করেন, কুৎসা রটান, এর মধ্যে হয়তো কোনো আনন্দ খুঁজে পান। কিন্তু এটা অন্য কাউকে এমন কষ্ট দিতে পারে, যা আপনি নিজে কখনো বহন করতে চাইবেন না। এটি মনে রাখা ভালো।

আমি জানি ‘অপরের মুখ ম্লান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই’—এমন মানুষ আছেন সমাজে। যারা এমন নন, তাদের কাছে অনুরোধ, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।