মোবাইলের পর এবার দেশেই কম্পিউটার উৎপাদনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পউটার বা ল্যাপটপ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ওয়ালটনের মতো দেশেই পিসি উৎপাদন করে সেজন্য এই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করে আসছে বাজেটে (২০২১-২২) কম্পিউটার ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদক পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ কর সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে কম্পিউটার উৎপাদনের যন্ত্রাংশ আমদানীতে শুন্য শুল্ক আরোপের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
করকাঠোমো’র পরিবর্তন হলে স্যামসাং যেমন করে বাংলাদেশে কারখানা করে মোবাইল উৎপাদন শুরু করেছে তেমনি হুয়াওয়ে, ডেল, এইচপি ও লেনেভো বাংলাদেশে তাদের পরিবেশকদের মাধ্যমে কারখানা গড়ে তুলে হাইটেক পার্কের সকল সুবিধা নিয়ে দেশে পিসি’র বাজার আরো সহজলভ্য ও সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন এই উদ্যোগের প্রস্তাবক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ডিজিবাংলাকে- তিনি বলেন, ‘এখন দেশে রোবট তৈরি হয়, দামি দামি মোবাইল তৈরি হয়।এখন আমরা কম্পিউটার উৎপাদক দেশ হতে চাই। এজন্য কম্পিউটারের ওপর শুল্ক বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছি। কম্পোনেন্টের ওপর শুল্ক শুন্য করতে বলেছি। দেশে কম্পিউটার উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে এর বিকল্প আমি দেখি না।’
জানাগেছে, দেশে মোবাইল কারাখানা স্থাপনের মতো একই ধেরনের প্রস্তাবনাটি এরই মধ্যে ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) আকারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। করোনায় আমদানি শুল্ক বাড়ানোর অংশ হিসেবে এবার এই প্রস্তাবনাটি পাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর আগামী অর্থবছরের বাজেটে যদি এই প্রস্তাব পাস হয় তবে উৎপাদন না করলে উচ্চ হারে কর দিয়ে এই কম্পিউটার পণ্য ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হবে আমদানিকারকদের। এজন্যই বাজেটে (২০২১-২২) কম্পিউটার ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে ৩০-৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপরদিকে যারা দেশেই এই ডিভাইসগুলো সংযোজন বা উৎপাদন করবেন তাদেরকে স্বল্প কর দিতে হবে। পাশাপাশি এখন ওয়ালটন যেভাবে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের ৫টির মতো দেশে পিসি ও ল্যাপটপ রফতানি করে রপ্তানি প্রণোদনা পাচ্ছে তারাও সেটা পাবেন। একই সঙ্গে হাইটেক পার্কের সকল সুবিধাও পাবেন তারা।
সূত্রমতে, দেশেই কম্পিউটার ও ল্যাপটপ উৎপাদন সহায়তায় প্রস্তাবিত কাঠামোটিতে যেসব ম্যানুফ্যাকচারার বা উৎপাদক কম্পিউটার ও খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদন করবে শুল্ক ও করের ক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ ছাড় পাবেন। আর যারা যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন করবেন তারা অপেক্ষাকৃত কম হারে শুল্ক ও কর সুবিধা পাবেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে কম্পিউটার পণ্যের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। আর তখন থেকে এখনও পর্যন্ত এখাত আমদানিতে শুল্ক ও করমুক্ত রয়েছে। যদিও ওই সময়ে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ওই সময়ের বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার এখন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তিনিই মোবাইলের পর কম্পিউটার উৎপাদনেও দেশের সক্ষমতা অর্জনের এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। গত বছরের বাজেটের আগেও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের রূপকল্প বাস্তবায়নের নিরিখেই এবারের বাজেটে তার এই ইচ্ছেটির প্রতিফলন ঘটবে বলে ডিজিবাংলার কাছে প্রত্যাশা করেন তিনি।