ডিজিটাল বাংলাদেশের পদযাত্রায় বিটিআরসির অসামান্য অবদান ছিলো উল্লেখ করে নতুন আইনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ক্ষমতা আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়াও গ্রাহকের অজান্তে মোবাইলের টোকা কেটে নেওয়া বা ইন্টারনেট অপচয় রোধে লাইসেন্সে প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত এবং তথ্য-উপাত্ত চুরি বা সাইবার নিরাপত্তায় বিটিআরসিতে একটি ‘এক্সটার্নাল আইটি অডিট’ টিম গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ২০০১ এবং ২০১০ এর সংশোধিত টেলিযোগাযোগ আইনকে আমরা বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আধুনিক ও ভবিষ্যতমূখী আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। এখানে ২০১০ এর সর্বশেষ সংশোধনীর অনুসারেই বিটিআরসির কর্মপরিধি এবং দায়িত্ব নির্ধারিত থাকবে। আমরা রেগুলেশনের সাথে ইনোভেশনকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। উদ্ভাবনী সেবার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আমরা বিটিআরসির আয় বাড়াতে পারবো।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, গ্রাহকের অজান্তে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বা ব্যালেন্স কোনো মোবাইল অপারেটর বা কোম্পানি যাতে কেটে না নিতে পারে, সে ব্যাপারে বিটিআরসির প্রতি দুটি নির্দেশনা আমি দিতে চাই; প্রথমত, নিয়মিত ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি এক্সটার্নাল আইটি অডিট ফর্ম করা যেখানে ইন্টার্নাল ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করতে হবে এবং আউটসোর্সিং করতে হবে যাতে বিটিআরসির লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়; দ্বিতীয়ত, আমাদের নাগরিকদের তথ্য ও নেটওয়ার্কের সুরক্ষার জন্য নিয়মিত এক্সটার্নাল আইটি অডিট করা।
‘আমরা এখন রেগুলারলি ফাইন্যান্সিয়াল অডিটট করছি। এর ফলে মোবাইল অপারেটররা বকেয়া টাকাগুলো দিতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা আদায় করতে পাচ্ছি। কিন্তু এর পাশাপাশি একটা খুব শক্ত এক্সটার্নাল আইটি অডিট টিম আমি চাই যাতে বিটিআরসি ফরম করে। যেখানে আমাদের ইনহাউজ ইন্টারনাল ক্যাপাসিটি ডেভলোপ করতে হবে, পাশাপাশি আউটসোসিংও করতে হবে, থার্ড পার্টিকে ইনভলব করতে হবে যাতে কোনো কোনো মোবাইল অপারেটর বা আইএসপি সার্ভিস প্রোভাইডার বা অন্য কোনো লাইসেন্সি লাইসেন্সের প্রতিশ্রুত সেবা নাগরিকদের পৌঁছে দেয় এবং সেখানে যাতে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি না থাকে বা সেখানে যে কমিটমেন্ট করেছিল সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ না হয়। সেজন্য নিয়মিত একটা এক্সটার্নাল আইটি অডিট হয়। এর পাশাপাশি কোনো সাইবার ক্রিমিনাল কিংবা কোনো হ্যাকার যাতে এই ধরনের কোনো অবৈধ ইকুপমেন্ট দিয়ে আমাদের নেটওয়ার্ককে ক্ষতি করতে না পারে, যাতে আমাদের নাগরিকদের তথ্য বা দেশের তথ্য-উপাত্ত যাতে চুরি করতে না পারে সেজন্য একটা এক্সটার্নাল আইটি অডিট নিয়মিত হওয়া দরকার’- যোগ করে পলক।
পলক বলেন, আমরা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাই না, আপনাদের অভিযোগ ও পরামর্শগুলো শুনে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার সক্ষমতা বিটিআরসির রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের যে চারটি পিলার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বিদেশে গিয়ে রোমিংয়ের জন্য ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ভেরিফাই করতে হচ্ছে, বিটিআরসির পক্ষ থেকে আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে একজন নাগরিকের একই তথ্য বার বার না দিতে হয়। ফাইভজির জন্য নেটওয়ার্ক অপারেটররা যে স্পেক্ট্রামগুলো নিয়েছে সেগুলোকে সম্ভব হলে ফোরজির গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিটিআরসির প্রতি নির্দেশনা থাকবে ফাইভজি রোলআউটের একটা র্যাশনাল প্ল্যান তৈরি করা হয় যাতে মোবাইল অপারেটর এবং গ্রাহকদের জন্য সেটা সহজ হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রসঙ্গে টেলিকম মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি খাতের সমান অথবা অনেক ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রয়েছে। টেলিটককে অন্যান্য মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের প্রতিদ্বন্দী না হয়ে তাদের সহযোগী হিসেবে, এবং বিটিসিএলের অবকাঠামো বেসরকারি খাতের প্রয়োজনে ব্যবহার করাসহ আমরা প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। অল্প সম্পদ ব্যবহার করে বেশি সুবিধা পাওয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যে টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন বাস্তবায়ন করেছি। আমরা আগামী দিনে সবগুলো মোবাইল অপারেটর এবং অন্যান্য টেলিসেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করবো।
গণশুনানিতে অংশে নিতে নিবন্ধন করেন ৩০২৫ জন যা গত গণশুনানির চেয়ে চারগুণ বেশি। এছাড়া গণশুনানিকালে নিবন্ধিত ছাড়াও উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণ টেলিযোগাযোগ সেবা সর্ম্পকে তাদের প্রশ্ন উপস্থাপন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় মানসম্মত গ্রাহক সেবা নিশ্চিতের জন্য। টেলিযোগাযোগ খাতের সেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণশুনানি মাধ্যমে প্রাপ্ত গঠনমূলক পরামর্শ ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ্য ভূমিকা পালন করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান মো: আমিনুল হক, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌ: শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার মো: দেলোয়ার হোসাইন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন, সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং পরিচালকবৃন্দসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন ।