দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনিবার্হী কমিটির নির্বাচন নিয়ে রবিবার তিনটি প্যানেল থেকেই অনুষ্ঠিত হয়েছে শেষ মুহূর্তের ভোটার সম্মিলনের প্রচারণা। রোববার (৫ মে) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে ভোটের শেষ মুহূর্তের প্রকাশ্য প্রচারণা শেষ করে টিম সাকসেস।
অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি নিয়ে সোচ্চার ছিলো টিমটি। প্রতিশ্রুতি প্রাধান্য ছিলো বেসিস এর স্থায়ী ঠিকানার। আর নির্বাচিত হওয়ার পর এই দুইয়ে বিফল হলে আগাম পদত্যাগের ঘোষণা দেন টিম সাকসেসের কনভেনার মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক। এর বাইরে বর্তমানের ১১ জন এক্সিকিউটিভ কিমিটির সংখ্যাকে ২১ জনে রূপান্তর করার কথাও বলেন তিনি। এর মধ্যে আমরা ৪টি রিজার্ভ পদ রাখতে চাই যেখানে ২টি পদ থাকবে সংরক্ষিত নারী উদ্যোক্তা সদস্যের জন্য এবং ২টি পদ থাকবে টেকনোক্র্যাট সদস্যের জন্য।
তিনি ছাড়াও নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন অপর প্রার্থীরা। এরা হলেন সদস্য শ্রেণির তৌফিকুল করিম, মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, মো. সহিবুর রহমান খান, ফারজানা কবির, মো. শফিউল আলম, ইমরান হোসেন, সৈয়দা নাফিসা রেজা এবং এন এম রাফসান জানি (সহযোগী), আবদুল আজিজ (অ্যাফিলিয়েট) ও আবু মুহাম্মদ রাশেদ মজিদ (আন্তর্জাতিক)।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর ও উদীয়মান তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বাঁচাতে হলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি নিশ্চিত করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সবচেয়ে মজবুত সহযোগী হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ২০১১ সাল থেকে ২৭টি ডিজিটাল সেবা খাতে কর অব্যাহতি দেয়ার ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ১৩ বছর ধরে চলা এসব ডিজিটাল সেবা খাতে সরকারের কর অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না। তাদের কথা বলে আইটি খাতকে ধুম্রজালের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে আমি নিজেই আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অবকাশের ব্যাপারে তারা পরোক্ষভাবে কোনো মতামত দেয়নি। এছাড়া বিষয়টিকে সুস্পষ্ট করতে আমরা শিগগির আইএমএফ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক করতে চাই।
গার্টনারের রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা হয় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এ খাতের বৈশ্বিক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশেও দ্রুত গতিতে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসার প্রসার ঘটছে। এখন এই গতি থামিয়ে দিলে আমরা আন্তর্জাতিক দৌড়ে পিছিয়ে যাবো। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত হচ্ছে সোনার ডিম দেয়া হাঁস। কর অব্যাহতি বন্ধ করে দিলে চার/পাঁচশত কোটি টাকা পাবে সরকার। কিন্তু এর ফলে সোনার ডিম দেয়া হাঁস মারা যাবে। আর সোনার ডিম দেয়া হাঁস মারা গেলে এ দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত মারা যাবে।
গার্মেন্টস শিল্পের উত্থানের কথা উল্লেখ করে ডিউক বলেন, এখন যেমন গার্মেন্টস শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। তবে তাদের কর্মীদের বেতন তেমন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি না হলেও আইটি খাতের বেতন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হয়ে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিলে এ খাতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাদের মাসে গড় বেতন ৫০,০০০ টাকা হলে (২০ লাখ ধরলেও) ১,২০,০০০ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বেতন হবে। সে বেতনের ২৫% ট্যাক্স ৩০ হাজার কোটি টাকা এনবিআর-এর তহবিলে জমা হলে এ দেশের অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা কি অনুমেয় নয়? সামগ্রিক বিবেচনায় আগামী দিনেও তথ্যপ্রযুক্তি খাত আরেকটি গার্মেন্টস শিল্পর বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আইটি খাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রচারণায় বক্তব্যের ফাঁকে চলে ফ্যাশন শো।
প্রসঙ্গত, এবারের বেসিস নির্বাচনে জেনারেল ক্যাটাগরির ১১টি পরিচালন পদে তিনটি প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৩ জন প্রার্থী। ৮ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে বেসিস নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার এক হাজার ৪৬৪ জন। এর মধ্যে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ভোটার ৯৩২ জন, অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে ভোটার ৩৮৯ জন, অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরিতে ভোটার ১৩৪ জন ও আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে ভোটার ৯ জন।