কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালীর কাছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় প্রভাব খাটাতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালী মহল এলাকাভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব খাটাতে পারবেন না। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হবো।
রাজধানীর খিলগাঁও অধিবাসী জনৈক টেলিসেবা গ্রাহক আমানুর রহমানের অভিযোগের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। গ্রাহকের সুরক্ষায় বিটিআরসি সবসময় সোচ্চার রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পর আগামী বছর ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে এই শুনানি হবে বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
এছাড়াও অপর এক গ্রাহকের বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নেয়ার পরও সিম না দেয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি মহাপরিচালক খলিল উর রহমান জানিয়েছেন, একবার আঙুলের ছাপ নেয়ার পর তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার ছাপ দিলে তা যাবে না। বায়োমেট্রিক সংক্রান্ত কোনো প্রতারণা হলে বিটিআরসি-তে অভিযোগ করতে হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ফিচার ফোন ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে এখনো ভিওআইপি চলছে বলে জানানো হয় বিটিআরসি’র ৫ম গণশুনানিতে।
তিনি বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে খিলগাঁওয়ের ওই গ্রাহককে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী খিলগাঁও বিটিসিএল অফিসের ডিএমডিকে ফোনে যুক্ত করলে তিনি এক ঘণ্টা থেকে দুই দিনের মধ্যে গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার কথা দেন। তিনি বলেন, গ্রাহকের বিটিসিএল ইন্টারনেটের চাহিদা থাকায় আমার জীবন ধন্য। আমি খোঁজ নিয়ে ওই অঞ্চলে সংযোগ থাকলে এক ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ দিবো। আর না থাকলে দুই দিন সময় লাগবে।
বুধবার বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ৫ম বারের মতো অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে শুনানিতে বিটিআরসি কমিশনার মোঃ আমিনুল হক, প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল ও আশীষ কুমার কুন্ডু প্রশ্নোত্তর প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ জানান, কারো কাছে আন অফিশিয়াল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট থাকলে আতংকিত হবার কারণ নেই। কোনো হ্যান্ডসেটই বন্ধ হবে না আপাতত। কারো যদি মনে হয় তার সেটটি অবৈধ, তিনি সরাসরি বিটিআরসিতে এসে নিবন্ধন করে নিতে পারবেন। গ্রাহকের হাতে থাকা সব মোবাইল ফোন সেটই নেটওয়ার্কে কাজ করবে বলেও গ্রাকহদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার রিয়াজ আহমেদ বলেন, অবৈধ সেট থেকে থাকলে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে ডিসকানেক্ট করা হবে। আপনারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় বৈধ সেট কিনবেন। রেজিস্টার্ড না হলে সরাসরি বিটিআরসিতে এসে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করবো। সব মোবাইলই নেটওয়ার্কে কাজ করবে কোনোটাই বিচ্ছিন্ন হবে না।
হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের মেয়াদ না থাকা এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার পরিধি বাড়ানোর বিষয় উঠে আসে। মোবাইল অপারেটরদের টাকা ৩৫ দিন পর কেটে নেয়ার বিষয়টি কিভাবে বাড়ানো কে তা নিয়েও আলোচনা হয়। রাজধানীর অনেক এলাকায় অবৈধ ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে। কিন্তু সরকারি সংস্থা বিটিসিএল এখনও সব এলাকায় যেতে পারেনি। তাই সব জায়গায় বিটিসিএল এর কানেকশন দেয়ার অনুরোধ জানান গ্রাহকেরা।
জবাবে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারলে খলিলুর রহমান বলেছেন, এখন মোবাইল অপারেটররা সীমিত পরিসরে আনলিমিটেড প্যাকেজ দিলেও গ্রাহক প্রণোদনায় তারা এই পরিসর বাড়াবেন বলে আশা করি।
জুমে যুক্ত হয়ে রবি কেন পোস্ট পেইড মাইগ্রেশন দিচ্ছে না সহ ৬টি প্রশ্ন করেন একজন গ্রাহক। জবাবে অপারেটরদের এজেন্ট সেবাকে গ্রাহকের হাতের নাগালে নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
গ্রাহকের এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় চালু হয়েছে ফাইভজি। দেশেও ফোরজিকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। তবে বিটিআরসির মাধ্যমে একটি কমিটি হয়েছে কিভাবে ফাইভজিকে শক্তিশালী করা যায় তার জন্য কাজ চলছে। তাছাড়াও বহুতল ভবনের কারণে নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়। ইএমএফ ভীতির কারণে অনেকেই টাওয়ার বসাতে দিচ্ছে না। ভয়েজ ওভার ওয়াইফাই চালুর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও কিছু ল-ফুল ইন্টারসেপশন ইস্যু রয়েছে। ফলে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা চলছে যাতে রোমিং এর সময় ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে না হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেছেন, ৫জি নিয়ে বিটিআরসির বড় কোনো ভাবনা আপাতত নেই। ৫ জির চেয়ে ৪জির মানোন্নয়ন এখন বিটিআরসির মূল লক্ষ্য। ৪জির চূড়ান্ত মানোন্নয়ন করা গেলে, ৫ জি থেকে প্রাথমিকভাবে যে প্রত্যাশিত সেবা, সেটা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মনে করলে সরকার ৫জি প্রযুক্তিতে জোর দেবে।
এছাড়াও শুনানিতে স্পেকট্রাম বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, অ্যামাচার রেডিওর লাইসেন্স স্মার্টকার্ড করার প্রক্রিয়া চলছে। ট্যাক্সের বিষয়টি যাতে কমানো যায় সে বিষয়ে এনবিআরকে জানাবো।
দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই গণশুনানী। শুনানি শেষে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন আইনে বিটিআরসির সক্ষমতা কমবে না। নতুন প্রযুক্তির ব্যবসায় লাইসেন্সের জন্য স্যান্ডবক্স রাখা হয়েছে। আশা করি, ফ্যাসিলিটেটর হওয়ার পাশাশি রাজস্ব আয় বাড়াবে।
সূত্রমতে, এবার শুনানিতে নিবন্ধিত প্রশ্নকারী ছিলেন ৩ হাজার ২৫ জন। এদের মধ্যে অর্ধ শতাধিক প্রশ্নকারী প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক, বাংলাদেশের ভোক্তা সংঘ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশাজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।