মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চায় ডিজিটাল নজরদারি থেকে সাংবাদিকতাকে রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার (১৪ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্পাদক পরিষদ’ কর্তৃক আয়োজিত ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
সভায় সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এখন আগের মতো দক্ষ, যোগ্য ও সাহসী সাংবাদিক দেখা যাচ্ছে না। মেধা-সাহসিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই সাংবাদিকতার উন্নয়নে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবো।
পরিষদের সহ-সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ডিজিটাল নজরদারি শুধু নয়, যেকোনও নজরদারি থাকলে মুক্ত সাংবাদিকতা হয় না। আমাদের ডিজিটাল যুগের সাংবাদিকতা করতে হলে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। নইলে মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চা সম্ভব নয়।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে এর একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক, দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, ডিইউজে এর সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন প্রমুখ।
বক্তব্যে বিএফইউজে-এর সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে দেশে আইনি জটিলতা রয়েছে। আইন নেই, পুরাতন আইন এবং নতুন আইনসহ- মোট তিনটি ক্ষেত্রে মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা রয়েছে। আইন নেই- অর্থাৎ টেলিভিশনে যারা কাজ করেন তারা আইনত সাংবাদিকতার মধ্যে পড়েন না এবং তাদের আইনত কোনও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নেই। পুরাতন আইন- অর্থাৎ বহুদিনের পুরাতন আইন যখন যার যেমন প্রয়োজন তখন সেভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যেমনটা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ক্ষেত্রে ঘটেছে। নতুন আইন- অর্থাৎ নতুন নতুন আইন করায় মুক্ত সাংবাদিকতা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণে প্রথমে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৫৪ ধারা, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সেসব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম। কিন্তু নতুন আইনের ক্ষেত্রে অবস্থার পরিবর্তন হলো না। তাই আইনের তিনটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্মিলিতভাবে ক্যাম্পেইন করে কোন আইনগুলো সংবাদপত্রের জন্য বাধা হচ্ছে তা বের করে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।
সম্পাদক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন থাকলে দেশ আগাবে না। তাই আমাদের মধ্যে বিভাজন দূর করতে হবে। এখন তো লিখতে (পত্রিকায়) গেলে ভয় হয়। তবে সে ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ডেইলি নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, আমাদের সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমার কথা হলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এত আইন কেন ? আমরা এমন কী করি যে তার জন্য আমাদের হাত-পা বেঁধে দিতে হবে ? সাংবাদিকতার বিকাশ ও সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সমস্ত আইন কাঠামোকে একত্রিত করে আমরা ব্যবস্থা নেবো যে কী কী আইন কিভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করছে।