এক বছরে পুরুষের মোবাইল ফোন মালিকানা কমেছে ৪ শতাংশ
এক বছরের ব্যবধানে দেশে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট উভয়ের ব্যবহারই বেড়েছে। তবে লিঙ্গ বিবেচনায় প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষদের মোবাইল মালিকানা কমেছে। জাতীয় পর্যায়ে ২০২২ সালে মোবাইল ফোন মালিকানায় জাতীয় জনসংখ্যার অনুপাত ছিলো ৭৩ দশমিক ৮। ২০২৩ সালে এসে তা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ।
এর মধ্যে মোবাইলে নারীর মালিকানা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পুরুষের মোবাইল মালিকানা আগের বছরের চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশে ঠেকেছে। একইভাবে নারী-পুরুষের মোবাইল ব্যবহারের এই হার ২০২০ সাল থেকে নিয়মিত কমেছে। পুরুষের ক্ষেত্রে চার বছরে মোবাইল ব্যবহারের হার কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। নারীর ক্ষেত্রে দশমিক ৫ শতাংশ। একইসময়ে জাতীয় ভাবে মোবাইল ব্যবহার কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
তবে ৫ বছরের বেশি বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারেও এক বছরে তাদের হার বেড়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। সেই হিসেবে দেশের ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু-কিশোরই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ ছেলে এবং ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে। পল্লীতে এই হার যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৫ ও ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
পক্ষান্তরে দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৫০ দশমিক ১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এক বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। গ্রামে এই হার পুরুষ ৫৪ দশমিক ৩; নারী ৩৮ দশমিক ৩ এবং শহরে পুরুষ ৬৯ দশমিক ৮ এবং নারী ৫৬ শতাংশ।
- ২০২৩ সালে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পুরুষদের মধ্যে ৫১.৯ শতাংশ, নারীদের মধ্যে ৩৯.৭ শতাংশ।
- ৫ বছরের ঊর্ধ্বে গ্রামের নারীদের মধ্যে ৩৫.৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শহরে এই হার ৫১.৯ শতাংশ।
- ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০.১ শতাংশ। এই বয়সে শহরের নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট গ্রহীতা ৫৬ শতাংশ, গ্রামে ৩৮.৩ শতাংশ।
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’- ফলাফল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন করেন ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এক বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৩৫ দশমিক ৪ এবং নারী ৬১ দশমিক ২ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ২০২০ সালে ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ মোবাইল ব্যবহারকারী নারী কমেছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে রোববার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩-এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস ডিজি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন।
প্রতিবেদনের আলোকে মো. আলমগীর হোসেন জানান, এক বছরে দেশে ১৭ লাখ জনসংখ্যা বাড়লেও মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়েনি। শিক্ষা, কর্ম কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা সামান্য কমেছে। ২০২২ সালে যা ছিল ৪০.৬৭ শতাংশ আর ২০২৩ সালে হয়েছে ৩৯.৮৮ শতাংশ।
এদিকে গত বছর জুলাইয়ে প্রকাশিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২৩’ জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশের ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ খানায় ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ খানায়। আর ওই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খানার ৬৩ দশমিক ১ শতাংশই ছিলো শহুরে, বাকি ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ খানা গ্রামীণ জনপদের। অর্থাৎ এক বছরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খানার সংখ্যা বেড়েছে ৫ শতাংশ পয়েন্ট। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খানা পর্যায়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ খানা। ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ব্যবহার করে ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ, তবে নিজের মোবাইল আছে-এমন মানুষের হার ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ, কম্পিউটারে ব্যবহারে এই হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
এছাড়াও ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ খানায় রেডিও, ৬২ দশমিক ২ শতাংশ খানায় টেলিভিশন এবং ৮ দশমিক ৯ শতাংশ খানায় কম্পিউটার ব্যবহার করে। আর ফিক্সডফোন ব্যবহার করে ০ দশমিক ৭ শতাংশ খানায়, তবে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ খানায়। আর খানা পর্যায়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ, সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে ৯২ দশমিক ৪ শতাংশ। কম্পিউটার ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।