রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত খাজা টাওয়ার অগ্নি দুর্ঘটনায় ডেটাসেন্টার, সার্ভার, র্যাক, ক্যাবল সরিয়ে নেয়ার আগেই সোমবার বিল্ডিং থেকে এনটিটিএন-এ যুক্ত আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল কেটে দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেছেন, ডেসকো থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লিংক কেটে দেয়ায় আবার ইন্টারনেট সংযোগের গতিতে সমস্যা শুরু হয়েছে। আমরা এ নিয়ে বিল্ডিং মালিকে সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা জানিয়েছেন, ভুলবশত লাইন কাটা হয়েছে। সমস্যার সমাধানে চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে ডেসকোর উপ-ব্যবস্থাপক পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। আর খাজা টাওয়ারের মালিকপক্ষও এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে সকালে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। বৈঠকে আইএসপিএবি সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ আইআইজি ফোরাম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জুনায়েদ, ডাটা সেন্টারের প্রতিনিধি ছাড়াও ১০-১২জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানাগেছে, আজ ক্ষয়-ক্ষতি এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনায় করণীয় ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনায়, আইএসপি ও আইআইজি-গুলোকে নিজেদের ডাটা সেন্টার স্থাপনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আইনি অনুশাসন শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে আপদকালীন সময়ে এনটিটিএন-দের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ও তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে, সেবা দিতে আইএসপি ব্যবসায়ীদের দুই/তিনজনের কাছ থেকে ব্যাকআপ লিংক নিতে হয়। সেবাদাতা এনটিটিএন এর কাজের গতি খুবই ধীর হওয়ায় তারা যখন ১০০ লিংক ডাউন থাকলে তারা হয়তো দুটি বা তিনটি লিংক আপ করছেন তখন সার্ভিসটা ডাউন হচ্ছে। তাই আগামী দুই একদিনের মধ্যেই এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, আইএসপি ও আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে ৬ টেরাবাইট ব্যান্ডইউথ আউটেজ হলেও তারা সেবা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করেননি। তবে এখনো ৩ টেরাবাইটের মতো ডাউন রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এর মধ্যে ফেসবুক, গুগল, আকামাই এর মতো সেবাগুলো ডাউন আছে। ইন্টারনেট সব জায়গায় আপ হয়েছে।
বৈঠকে আপদকালীন সময়ে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরবিচ্ছিন্ন সেবার কৌশল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২ নভেম্বর বিটিআরসি চেয়াম্যানের সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে খাজা টাওয়ার ভবনে আগুন লাগে। ১৫তলা ভবনের নিচ তলায় ফার্সট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ৫ম, ৭ম, দ্বাদশ, ১৩ এবং ১৪তলায় রয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক। আর আগুণের সূত্রপাত ঘটা ৪র্থ তলায় রয়েছে গ্রামীণফোন ডেটা সেন্টার।
এছাড়াও ৮ম তলায় সেবা আইসিএক্স, ৯ম তলায় আর্থ টেলিকমিউনিকেশন, ১০ম তলায় ঢাকা কোলো’র ডেটাসেন্টার ও একাদশ তলায় এনআরবি টেলিকমের অফিস রয়েছে। এছাড়াও ভবনের ১০ তলাতেই আইএসপি প্রতিষ্ঠান রেস অনলাইন ও অরবিট টেলিকমের অফিস। তবে ষষ্ঠতলাটি ছিলো খালি।