আজ পৃথিবী শুরু করলেও ১২ বছর আগেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে একজন নারী ও একজন পুরুষকে নিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট অর্থনীতিতে নারী-পুরুষ অনুপাত সমান করতে আইটি খাত থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একইসঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা একটা তহবিল গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
এছাড়াও পাঠ্যক্রম থেকে বৈষম্যমূলক চিন্তা দূর করতে গার্হস্থ্য শিক্ষার মতো পাঠ উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় মেয়েদের চিকিৎসক ছাড়া আন্যান্য পেশায় অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেল। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নারীদের সহজ ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
১২ বছর আগেই নারী-পুরুষ সাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : পলক
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার রাতে বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি) এর নতুন নেতৃত্বের অভিষেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লুনা শামসুদ্দোহা স্মরণে অনুষ্ঠানে বক্তারা আইসিটি খাত সহ উদ্যোক্তা হিসেবে লুনা সামসুদ্দোহাকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। একইসঙ্গে শিক্ষকতার জায়াগা থেকে প্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে মূলধারার বিশেষ কিছু দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন।
বিডাব্লিউআইটির নব নির্বাচিত কমিটির সহ সভাপতি রুমেসা হোসেইনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইসিটি বিভাগ সব সময় নারী বান্ধব। এজন্যই শিপাওয়ারের মতো উদ্যোগের আওতায় প্রায় ১০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছি । এছাড়াও হার পাওয়ারের মাধ্যমে ১২শ নারী উদ্যোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে সিড মানি দিয়েছি। আইসিটি ডিভিশনের আওতায় যতগুলি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আছে, প্রত্যেক জায়গায় নারীদের জন্য ৩০% কোটা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেখানে নূন্যতম নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে টার্গেট দিয়েছেন, দেশের আইটি সেক্টরে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সেসাথে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ইকনোমিতে নারী এবং পুরুষে সমান সমান অংশগ্রহণ থাকবে।
বিডব্লিউআইটি সাধারণ সম্পাদক আসিয়া নীলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি ব্রায়েন শেলার, বেসিস সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমরি জুবেরী হিমিকা, বেসিস সভপতি রাসেল টি আহমেদ এবং কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব সুপর্ণা রায়।
মি. ব্রায়ান শেলার বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে ভাল লাগছে। বাংলাদেশের নারীরা আইটিতে অংশগ্রহণে অনেক আগ্রহী। এখানে নারীরা আইটিতে পড়াশোনা করে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছে। বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজারের বেশি স্টুডেন্ট আমেরিকাতে পড়াশোনা করছে। এটা ভাল দিক। আমেরিকায় উইম্যান পাওয়ারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কেননা নারী অধিকার মানে মানুষের অধিকার।
ক্যারিয়ার জীবনে একজন নারীদের বিশেষ গুণ উল্লেখ করে বেসিস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা যখন কোন কোম্পানিতে নারীদের কলিগ হিসেবে পাই, তাদের মধ্যে কমিটমেন্ট, ডেডিকেশন ও টিমওয়ার্ক এই বিশেষ গুণগুলি আমরা দেখতে পাই। নারীরা সবসময় দায়িত্বশীলতার সাথে সব কাজ করে থাকে। এই শিক্ষাটা তারা পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।
বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরা জুবেরি হিমিকা একজন নারী ট্রিপল ই পড়ার পর কীভাবে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে, বিপিও বা কল সেন্টারে আসবে, তার কোন বিশেষ দক্ষতাটা বৃদ্ধি করতে হবে, কীভাবে বৃদ্ধি করতে হবে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা নারীর জার্নি আলাদা। তাই আমার মনে হয় এখনই উপযুক্ত সময়, এই জার্নিগুলিকে আলাদা করা বা উপশাখা করার খুব প্রয়োজন। যখনই উপশাখা তৈরি হয়, তখন কারিকুলামে সেটা খুব কাজে লাগে। তখন লাইফ স্টাইল চেঞ্জগুলো কাজে লাগে। তখন অন্যান্য স্কিলসগুলিও কাজে লাগে। নারীদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা একটা ফান্ড ঘোষণা করার কথা উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করে তিনি বলেন, একজন নারী উদ্যোক্তার স্ট্রাগলটা এতই আলাদা হয় যে, আপনি তাকে মেইন স্ট্রিমের মধ্যে একই ফরমুলাতে ফেলতে চাইলে, সে কোনভাবে ফান্ড পাবে না। নারীরা যে উদ্যোগটা নিয়ে লড়াই করে, হয় সেটা তার জীবনের অংশ বা সমাজের অনেক বড় অংশ। সে মাঝামাঝি কোন চিন্তা করে না।
বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংক থেকে লোন পেতে উদ্যোক্তাদের নানান ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া একসাথে সহযোগিতা করলে তাদের জন্য কাজটা সহজ হয় বলে জানান সম্মানিত আলোচক সুপর্ণা রায়।
এসময় আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার, সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন শিপন, বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখেরা নবনির্বাচিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডাব্লিউআইটির নবনির্বাচিত কমিটির সহসভাপতি নাজনীন কামাল, পরিচালক নাজনীন নাহার, কোষাধ্যাক্ষ নাজমুস সালেহীন, সদস্য সেলিনা আক্তার, কানিজ ফাতেমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিডব্লিউআইটি নির্বাহী সদস্য নাজনীন নাহার। ধন্যবাদ ব্যক্ত করেন নতুন সভাপতি রেজওয়ানা খান। তিনি বলেন,
বিডব্লিউআইটি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলা করার জন্য নারী নেতৃত্ব তৈরির উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া দুটি প্লাটফর্মই ব্যবহার করে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে জন্য আমাদের সরকার ও স্টেকহোল্ডারদের সাপোর্টের প্রয়োজন রয়েছে।