এলডিসি দেশগুলোতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মত দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৬ মার্চ) কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের (কিউএনসিসি) অডিটোরিয়াম-৩ এ অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে ‘স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেটিভ সোসাইটির জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আলোচনায় দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য পাঁচটি মূল সহায়তা চেয়েছেন, যা একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে উন্নীত করতে সহায়তা করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
প্রধান সহায়তার প্রথম হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকরী প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদানকে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি এলডিসিগুলোতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা চানা।
তৃতীয় সহায়তা হিসেবে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলায় পেশাদার গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি-রাসায়নিকের জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে এলডিসি মওকুফের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন- দুটির জন্যই সহায়ক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী রূপকল্পে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত করে বলেন, এটি চারটি মূল উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে তার সরকার জনগণের কাছে ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই সময়ে এটিকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে যে আমরা আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি। তবে এ মহামারি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ করা অপরিহার্য।
শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য এলডিসিগুলোর গড় জিডিপি ব্যয় এখনো ০.৬ শতাংশের নিচে রয়েছে ও তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে রয়েছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই।
তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের ভবিষ্যৎকাজে সম্পৃক্ত করা উচিত। এর জন্য আমাদের অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারত্ব দরকার।
এলডিসি উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই তার যোগ্যতা প্রমাণ করবে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা।