জোয়ার আসলে ভাঁটা তো পড়বেই। প্রকৃতির সেই নিয়মেই হয়তো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে ভাটির টান। টালমাটাল অবস্থায় মাইক্রো ব্লগ টুইটার। বেকায়দায় ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজানও। শোনা যাচ্ছে, মেটা এবং স্ন্যাপের মতো প্রথমসারির কোম্পানিগুলোর সাবেক কর্মীদের নতুন ‘কাজের সুযোগ’ খোঁজার ঘোষণাও। ভালো নেই ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজারও।
গুগল ও ইউটিউবের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের উদ্দেশ্যে লেখা এক খোলা চিঠিতে কর্মী ছাঁটাই করে অবশিষ্ট কর্মীদরে বেতন কমাতে বলেছেন বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টোফার হন। খরচের বেলায় অ্যালফাবেটের আরও মিতব্যয়ী হওয়া উচিত এবং স্বচালিত গাড়ি নির্মাণ উদ্যোগের মত প্রকল্পগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অর্ধেক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরে সপ্তাহখানেক না গড়াতেই আবারো কর্মীছাঁটাই শুরু করতে যাচ্ছেন টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্ক। রবিবার এমনই দাবি করেছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
ব্লুমবার্গের দাবি, টুইটারের সেলস এবং পার্টনারশিপ বিভাগে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন মাস্ক। ওই দুই বিভাগের প্রধানেরা যাতে মাস্কের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন, সে বার্তাও পৌঁছে গিয়েছে তাদের কাছে। যদিও মাস্কের কথা মেনে নিজের বিভাগের কর্মীদের কাজ থেকে সরাতে রাজি হননি সেলসের বিভাগীয় প্রধান রবিন হুইলার। একই পথে হেঁটেছেন পার্টনারশিপের প্রধান ম্যাগি সানিউইক। তার জেরেই তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন মাস্ক।
মাস্কের এই সিদ্ধান্তে টুইটারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। কারণ, জনসংযোগ বিভাগটিই যে উড়িয়ে দিয়েছেন মাস্ক!
অ্যামাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা, ধনকুবের জেফ বেজোস মনে করছেন, দরজায় কড়া নাড়ছে আর্থিক মন্দা। তাই আমেরিকাবাসীর উদ্দেশে তার পরামর্শ, “আসন্ন ছুটির ম্যেসুমে টিভি, ফ্রিজ কিংবা দামি কোনও কিছু কেনার পরিকল্পনা করে থাকলে, আপাতত তা স্থগিত রাখুন। হাতে পয়সাকড়ি জমিয়ে রাখুন।”
১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই পরিকল্পনা প্রকাশের পর আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেজোসের দাবি, অর্থনীতি যে খাতে বইছে, তাতে সব কিছু ঠিক বলে মনে হচ্ছে না। অর্থনীতির ক্রমাবনতির উদাহরণ হিসাবে বেজোস সামনে রাখছেন, সাম্প্রতিক কালে বড় সংস্থাগুলি থেকে ব্যাপক হারে ছাঁটাইয়ের বিষয়টিকে।
ওদিকে বড় সঙ্কটে পড়েছে ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এফটিএক্স। মার্কিন আইন অনুসারে ‘চ্যাপ্টার ১১ দেউলিয়া সুরক্ষা’ চেয়ে সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড।
আদালতে জমা দেয়া নথি অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৩.১ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে শীর্ষ ৫০ ঋণদাতার।
গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দেউলিয়া হওয়ার জন্য করা আবেদনে প্রতিষ্ঠানটি পাওনাদাতাদের নাম উল্লেখ না করে ১০ শীর্ষ ঋণদাতার কাছে দেনার পরিমাণ দেখিয়েছিলো ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের পতনে অস্থির ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোম্পানি অধিগ্রহনের মাধ্যমে এফটিএক্স-কে বাঁচাতে রাজী হয়েও পরে পিছু হটেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বাইন্যান্সের সিইও চ্যাংপেং ঝাও।
বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারির পর ডুবতে বসা মার্কিন কর্পোরেট জায়ান্ট এনরনের শেষ পর্যায়ে সম্পদের তরলীকরণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন জন জে রে। এখন তিনিই এফটিএক্স গ্রুপের ধস সমালানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। এফটিএক্স নিয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’।
এরইমধ্যে সেবাগ্রাহদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি এবং সেখান থেকে আসা তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বেচার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে আইফোন নির্মাতা অ্যাপল। অ্যাপলের নীতিমালা পরিবর্তনের ধাক্কা গিয়ে লেগেছে ফেইসবুক তথা মেটার বিজ্ঞাপনী আয়ে। পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে সুদের হার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি বিপাকে পড়েছে। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতিকে ‘অস্বাভাবিক ও অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থা’ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।