দেশজুড়ে স্থাপিত হাইটেক পার্ক ও বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ ও স্বাস্থ্য-খাদ্য প্রযুক্তিতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থাইল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার পাশাপাশি সেখানে আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সেশন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ উপস্থাপনের কথাও তুলে ধরেন বক্তব্যে।
থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আলোচনার ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক উন্নতি বিশেষ করে এসডিজি অর্জনের বিষয়টি (এসেছে)…। পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে যোগাযোগটা বেশি প্রয়োজন। সেদিক থেকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের আলোচনাটা অত্যান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে। তাছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করেছি। আমরা হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক জোনে তাদের জায়গা দেবো।’অব্যাহতি, জ্বালানি ও পর্যটন এবং মুক্ত বাণিজ্যে সহযোগিতা পাওয়ার নতুন দুয়ার খুলে গেলো।
তিনি বলেছেন, থাইল্যান্ডে আমার সরকারি সফরটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন , খদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য আমরা সমবায় ও প্রযুক্তি ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন করা হচ্ছে। কৃষকের জমি যেন বেহাত না হয়, সে জন্য ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। হাওর অঞ্চলে কৃষি যান্ত্রিকী করণের জন্য ৭০ ভাগ ভর্তুকী দেয়া হচ্ছে। গবেষণায় কৃষিতে ব্যাপক সফলতা এসেছে।
সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় কৃষকদের জমি নিয়ে নেওয়া হবে— এমন ‘আস্থাহীনতার’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা ডিজিটালাইজড করে ফেলেছি, যার জমি তারই থাকবে। কৃষকের জমি কখনও নেওয়া হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশে জাতীয় সংসদ এর সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অন্যান্যের মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ডান দিকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু উপস্থিত ছিলেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উভয় সফরের অংশ হিসেবে ২৪ এপ্রিল ব্যাংকক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন।
সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফরে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর বিষয়ে অগ্রগতি, আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে বিশেষ গুরুত্ব পালন করবে। ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’- এর প্রার্থিতা লাভের জন্য এ সফর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেছেন, সরকার গঠনের পর এইবার প্রথম বিদেশ সফর করলাম থাইল্যান্ডে। বলতে গেলে ঘরের কাছের পড়শী দেশ। আমি সবসময় বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই। থাইল্যান্ড কিন্তু খাদ্য, ফসল, ফল উৎপাদনে অনেক গবেষণা ও উৎকর্ষতা আছে। এইসব ক্ষেত্রে মতবিনিময় করছি। গবেষণা কিভাবে দুইদেশ ভাগাভাগি করতে পারি, অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করতে পারি।’
ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সোচ্চার হাওয়ার আহ্বান জানিয়ে অস্ত্র কেনা-বেচা বাণিজ্যে টাকা ব্যয় না করে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় ব্যয় করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।