বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল বিপ্লব সবে শুরু হয়েছে। স্মার্ট হোম ও অটোনোমাস ড্রাইভিংয়ের মতো তথ্যনির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন।
সামান্তরাল ভাবে এখন সামনে চলে আসছে পরিবেশ। তথ্য বলছে, পৃথিবীতে পরিবহণ খাতে বছরে ৮০০ কোটি টনেরও বেশি কার্বন নির্গমন ঘটে। সেই হিসাবে, বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী এই খাত। সেইসঙ্গে অন্যান্য গ্রিনহাউজ গ্যাস। কিন্তু এবার এই দায়ের সঙ্গে নতুন করে উঠে এসেছে ইন্টারনেট এর নাম।
সেনকেন বার্গ নেচার রিসার্স সোসাইটি’র গবেষণা বলছে, এখন পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে বিদ্যুতের চাহিদার মাত্র ১%-এর উৎস ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেট যদি একটা আস্ত দেশ হতো, বিদ্যুতের চাহিদার মাপকাঠিতে সেটি শীর্ষ পর্যায়ে থাকতো। গোটা বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সার্চ ইঞ্জিনে মাত্র ২০ বার কোনো কিছুর খোঁজ করলেই এনার্জি সেভিং বাল্বের এক ঘণ্টার সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। একইভাবে ইন্টারনেটের জন্য বিশাল সার্ভার ২৪ ঘণ্টা ধরে চালু রাখতে যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট নোডও এর ব্যতিক্রম নয়।
সেনকেনব্যার্গ সোসাইটির ফল্কার মোসব্রুগার হিসাব কষে বলেছেন, আগামী বছরগুলোতে ইন্টারনেটের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩.১৪% দাঁড়াবে। অর্থাৎ ব্যাপক আকারে ডিজিটালাইজেশনের কারণে বিদ্যুৎ খরচ বিশাল মাত্রায় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ফাইভ-জি ও পরে সিক্স-জি নেটওয়ার্কের কারণে অভাবনীয় পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।
কিন্তু ‘বায়োস্ফিয়ার’ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভূতত্ত্ববিদ রাইনহল্ড লাইনফেল্ডারের ভাষায়, সূর্যের শক্তি জীবজগত চালু রেখেছে। যে জিনিসের আর প্রয়োজন নেই, সেটি পচে যায় এবং তা থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়। কিছুই হারিয়ে যায় না। যে প্রণালীতে প্রায় সবকিছুর মূল্য টাকার অংকে স্থির করা হয়, সেটি পৃথিবীর কতটা ক্ষতি করছে, মানুষের মধ্যে সেই উপলব্ধি আনা উচিত।
তাই “মোবাইল ফোনে লিথিয়ামের মতো নানা উপকরণের পাশাপাশি যে সামান্য স্বর্ণ রিসাইকেল করা হয় সেদিকে নজর বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও উপকরণকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পুনর্ব্যবহারের এক চক্র চালু করা উচিত।”