ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি, ই কমার্স, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটাল সেবাকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। তাই এখন থেকে এই খাতে ধর্মঘট, লকডাউন বা লে-অফ বেআইনি হিসেবে সঙ্গায়িত করা হয়েছে। এই খাতে ধর্মঘট ডাকলে এমনকি এতে সমর্থন দিলেও সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান আসছে শিগগিরই।
এ লক্ষ্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা আইন ২০২২-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে জন-জীবন ব্যাহত হয় এমন কোনো ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই আর ধর্মঘট বা হরতাল ডাকা যাবে না।
এর আগে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাবে সংসদে। এরপর গেজেট আকারে এটি জারি করবে সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে দুপুরে সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, আইনে অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি, ই কমার্স, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটাল সেবার নাম রয়েছে। ডিজিটাল আর্থিক সেবা যেমন মোবাইল আর্থিক সেবা; বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে গ্যাস ও কয়লা। এগুলো অত্যাবশ্যক সেবা। এগুলোর বিষয়ে যদি কোনো অচলাবস্থা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে সরকার ইন্টারফেয়ার করতে পারবে এবং যেখাবে নির্দেশ দেবে রাষ্ট্রীয় কল্যানে, সেভাবে পরিচালিত হতে হবে।’
নতুন আইনটিতে ১৪টি ধারা আছে জানিয়ে এর ৪ নম্বর ধারার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যেখানে বলা হয়েছে সরকার কোন বিষয়গুলোতে অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা হিসেবে ঘোষণা করবে। আর ৫ ধারায় বলা হয়েছে ধর্মঘট, লকডাউন বা লে-অফ নিষিদ্ধ করার কথা। অনেক সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে-অফ বা নক আউট করা হয়। সরকার যদি মনে করে এগুলো জাস্টিফায়েড না তাহলে এগুলো নিষিদ্ধ করতে পারবে। আইনেরে বলে ‘যদি কেউ এ জাতীয় অপরাধ করে তাহলে সাধারণভাবে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আবার বেআইনি ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য যদি সমর্থন দেয় তাহলে ১ বছরের কারাদণ্ড ও অনুধ্র্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাব ‘।
আইনটির খসড়া অনুযায়ী, দেশের প্রতিরক্ষার উদ্দেশে প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালামাল উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা; খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মুজত বা বিতরণ কাজে নিযুক্ত সরকারি মালিকানাধীন বা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিসেবা; হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যসেবা বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি সম্পর্কিত কোনো পরিসেবা; ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয় বিক্রয়সহ এসব কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিসেবা; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিসেবা; তেলক্ষেত্র, তেল শোধনাগার, তেল সংরক্ষণ এবং পেট্রোলিয়াম বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিসেবা এবং টাকশাল ও নিরাপত্তামূলক মুদ্রণ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিসেবাকে সরকার গেজেট দিয়ে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।
এর বাইরেও জনগণের অসহনীয় কষ্টের কারণ হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে বা দেশের কোনো অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছয় মাসের জন্য কোনো চাকরি বা কোনো শ্রেণির চাকরি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিসাবাকেও সরকার ছয় মাসের জন্য অত্যাবশ্যক পরিসেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। প্রয়োজনে এর মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো যাবে।