অক্টোবরে কোম্পানির নাম পাল্টে ‘মেটা’ করার পর থেকেই ‘মেটাভার্স’-কে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ । পেশাদারী কাজ, খেলাধুলা এমনকি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভার্চুয়াল জগৎটাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
কিন্তু নানাভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করলেও তাতে সম্ভবত হিতে বিপরীত হচ্ছে। কোম্পানির বাজার মূল্যায়নে ২০১৬ সালে তলিয়েছে ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালে মেটার বাজারমূল্য বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও ২০২২ সালে এসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকাতেও নেই মেটা
ফলে গত বছর বাজারে মূলধনের আকার এক লাখ কোটি ডলার ছাড়ালেও এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড। শেয়ার বাজারে ৭৩ হাজার কোটি ডলারের মূলধন হারিয়েছে জাকারবার্গের কোম্পানি।
সিএনবিসি প্রতিবেদন বলছে, কেবল ২০২২ সালেই ৭০ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে এ সোশাল মিডিয়া জায়ান্ট। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর কেবল ২৭ অক্টোবর শেয়ার বাজারে মেটার শেয়ার দর পড়েছে ২৩ শতাংশ।
অথচ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১ লাখ কোটি ডলার বাজার মূলধনের মাইলফলক ছোঁয়ার পর অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজনের মত কোম্পানির কাতারে দাঁড়িয়েছিল মেটা। ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যাওয়া এই চার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখনও বাজারে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। ইলন মাস্কের টেসলা এবং হার্ডওয়্যার নির্মাতা এনভিডিয়াও এখন বাজারমূল্যের হিসেবে মেটার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু মূল্য পতনে মার্ক জাকারবার্গের কোম্পানি বাজারমূল্য এখন ফাইজার ও কোকাকোলার কাতারে নেমে এসেছে।
বলা হচ্ছে, অ্যাপল নিজস্ব আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য গোপনতা নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আনায় ধাক্কা লেগেছে মেটার বিজ্ঞাপনী ব্যবসায়। বিজ্ঞাপন ব্যবসা থেকেও কোম্পানির আয় কমার পাশাপাশি বছরের শেষ প্রান্তিকেও আয় কমার আভাস দিয়েছে মেটা। সঙ্গত কারণেই বুধবার কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জাকারবার্গকে মনে হয়েছে কিছুটা ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’।
কিন্তু কেন এমন হলো?
কেননা, ক্রমেই বাড়ছে খরচ। আর তার জেরে ওয়াল স্ট্রিটে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে মেটা। চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সংস্থার ব্যয় আরও প্রায় এক পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তার জন্য মার্ক জুকারবার্গের পরীক্ষামূলক প্রকল্পগুলিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। খরচ এত বাড়ছে দেখে শেয়ার ধরে রাখতে অনীহা বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীদেরই। সংস্থার মুনাফায় এই নিয়ে টানা চতূর্থবার পতন। স্বাভাবিকভাবেই ত্রৈমাসিকের ফলাফলের পরেই সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বেচতে শুরু করেন তাঁরা। আর এর ফলে এক লহমায় সংস্থার বাজার মূল্য থেকে $৬৭ বিলিয়ন স্রেফ হাওয়া হয়ে যায়।
হাল ছাড়তে নারাজ জাকারবার্গ
তবে হাল ছাড়তে নারাজ জাকারবার্গ। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সেখানে নজর না দিলে সেটা আমাদের ভুল হবে।আমরা সেরার সেরা কাজ করছি। এভাবে এটাকে বিচার করাটা ভুল। আগামী ৫-১০ বছরের সময়পর্বে মেটাভার্সের আসল পরিণতি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে।’