বাংলাদেশে বছরে ২০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আর ২০৩৫ সালের মধ্যে এই বর্জ্যের পরিমাণ ৪৬ লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত হবে। এই হার এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বেশি যা মানব শক্তিকে দারুণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে বলে সতর্ক করেছে গবেষণা সংস্থা ভয়েসেস ফর ইন্টার্যাকটিভ চয়েস অ্যান্ড ইমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)।
রাজধানীর সিভিক সেন্টারে শনিবার (২৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ‘ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১’-এর পর্যালোচনা এবং টেকসই বিজনেস মডেল শীর্ষক সভায় এই সতর্ক বার্তা দেয় হয়। সভায় ই-বর্জ্য দূষণ থেকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিরাপদ করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেন বক্তারা।
সাংবাদিক সালিম সামাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ই-বর্জ্যবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, যথার্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, আইনের দুর্বলতা দূর করা এবং ই-বর্জ্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পুনর্ব্যবহারের আহ্বানও জানান বক্তারা। এ লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনগুলোতে ই-বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদে সঞ্চালনায় সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, সামাজিক আন্দোলনের নেতা আমিনুর রসুল, সনি-র্যাংসের প্রতিনিধি জহিরুল হাসান, সাংবাদিক আহমেদ তোফায়েল প্রমুখ।
এনজিও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১-এর পর্যালোচনা এবং করপোরেট বিজনেসের মডেলের ওপর একটি জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ ইলকট্রিক ইলেকট্রনিকস নির্মাতাদের নিজস্ব কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। তবে তারা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপন করলে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যা এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বেশি। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে বছরে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হবে। বাংলাদেশে বছরে ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি হয়, যার ৪০ শতাংশ রেফ্রিজারেটর ও ৩০ শতাংশ টেলিভিশন।
সাংবাদিক সালিম সামাদ বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দেশে একটি পরিবেশবান্ধব ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সব বিভাগীয় শহরে, সম্ভব হলে সব জেলায় গড়ে তুলতে হবে। শহরে বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিধিমালা বাস্তবায়নের স্বার্থে পরিবেশসম্মত ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্ট গড়ে তোলা আবশ্যক এবং এক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন।
সভায় জানানো হয়, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য উৎপাদনও বাড়ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে যতদ্রুত সম্ভব এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রয়োগের আহ্বান জানান বক্তারা।
এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সভায় ১১ সদস্যের ‘ই-বর্জ্যবিষয়ক জাতীয় প্রচারণা কমিটি’ গঠন করা হয়।