গত দুই দিন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই অনুষদে স্কুলিং শেষে বিটিআরসি প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কেন্দ্র সনদ বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৮ম বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স (বিডি সিগ)। শনিবার বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ( বিটিআরসি) এর চেয়ারম্যান প্রকৌঃ মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রযুক্তিকে ভয় না করে, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর যে ডিভাইড আমরা দেখছি, তা সময় মতো ঘুচে যাবে।
এসময় প্রযুক্তির ক্ষেত্র আগামীর তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দিবে এবং নির্ধারিত সময়ের আগে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের সচেতনতা মূলক স্কুলিংয়ে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট থাকবে বলে সবুজ সঙ্কেত দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জন্য তাই প্রযুক্তির সাথে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইডের ধরণ বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশে অনেক মানুষ ইন্টারনেট একসেসের বাইরে রয়েছে উল্লেখ করে, প্রতিটি গ্রামে এখনো ফিক্সড ব্রডব্যান্ড নেই, তবে মোবাইল ইন্টারনেট রয়েছে।
‘আমরা ডিজিলাইজড করেছি তবে ড্রাইভারলেস কার কিংবা ক্যাশলেস সোসাইটির মানুষ সময়ের সাথে সাথে গ্রহণ করবে, সময়ের সাথে মানুষ প্রযুক্তির সাথে এডজাস্ট করে নিবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা চালকবিহীন গাড়ির চেয়ে আমাদের জরুরি দরকার উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে হবে, – যোগ করে প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ।
আমাদের দেশের জন্য যেসব প্রযুক্তি দরকার, সেগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইডের ধরন ভিন্ন। সময়ের সঙ্গে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা চালকবিহীন গাড়ির চেয়ে আমাদের জরুরি প্রয়োজন উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা। দেশের জন্য যেসব প্রযুক্তি প্রয়োজন, সেগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেজন্য দেশকে সমৃদ্ধ করতে হলে তরুণ মানবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ) চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল বিভক্তি শুণ্যের কোঠায় নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জ হলেও যেহেতু প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বাড়াতে হলে ডিজিটাল অবকাঠামো, ডিজিটাল সেবা এবং সেবা গ্রহণের বিষয়গুলো উন্নত ও সহজলভ্য করতে হবে। ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বাড়লে অর্থনৈতিক বৈষম্য, নারী-পুরুষ বৈষম্য কমে আসবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই জনবান্ধব, জলবায়ুবান্ধব ও নারীবান্ধব হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হলে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হতে হবে। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে ভয় না পেয়ে সময়ের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে বিটিআরসি’র সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, তরুণ, নারী এবং যুবকদের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকান্ডে অংগ্রহণ এবং তাদের মতামতকে গ্রহণ করতে হবে। এআই, বিগ ডাটা, আইওটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, তাই আমাদের শেখানোটাকেও সমান্তরালভাবে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংগ্রহণ করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি ডিজিটাল ডিভাইড বাড়িয়ে দিবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত বৈষম্যকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে সমাধান করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে বিএনআরসি সিইও এ এইচএম বজলুর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জুলকারিন জাহাঙ্গীর, প্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডিজিটাল বৈষম্য শুন্যের নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেন।
এর আগে বিটিআরসি কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ সেশনে উপস্থিত ৮২ জন ফেলোদের সামনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মোঃ শাহরিয়ার হাসান জিসান। এছাড়াও প্রযুক্তি আইন এবং এতে ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা বিষয়ক সেশনের সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল হক। তিনি বলেন, প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালার প্রয়োজন হয়।
এতে কি-নোট উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মোঃ সাইমুম রেজা তালুকদার। নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ক শেসনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রযুক্তিবিদ, টেলিকম বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি-বেসরকারি বহুপক্ষীয় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।