টিকটক। অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের তরুণদের সবচেয়ে পছন্দের ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ। বিশ্বজুড়েই অ্যাপটির ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানা চটকদার কাহিনী। তবে সেই সমালোচনা ও উন্নসিকতা থেকে মুক্ত হতে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের নিয়ে সচেতনতা প্রচারণায় নেমেছে অ্যাপটির পরিচালনা পর্ষদ। সেই সূত্র ধরেই বুধবার রাতে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে শতাধিক জনপ্রিয় কন্টেন্ট নির্মাতাদের একত্রিত করেছিলো টিকটক বাংলাদেশের টিম।
‘লেটস টক সেফটি: #সেফারটুগেদার’ নামের এই আয়োজনের শুরুতেই অভ্যাগতদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় টিকটক-এ সদ্য যুক্ত হওয়া ৬ নিরাপত্তা দূতকে। শুরুতেই তারা অনলাইন জীবনে নিজেদের অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ফাঁকে ফঁকে এই আলোচনায় যুক্ত করা হয় উপস্থিত কন্টেন্ট নির্মাতাদের।
অনুষ্ঠানে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোক্তা আয়মান সাদিকের সঞ্চালনায় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বলেন, ‘সব কিছুর ভালো মন্দ আছে। আমরা খারাপটা রেখে ভালোটা গ্রহণ করবো। টিকটক থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
আয়মান জানান, তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ফেসবুক থেকে টিকটকে রিচ বেশি হয়। আর টিকটক-এ প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান যেটি কন্টেন্ট নির্মাতাদের সুরক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই অনলাইন দুনিয়া নিরাপদ রাখতে সবাইকে নিয়েই তারা কাজ করবেন। অনলাইনে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় সে বিষয়ে তারা সবাইকে সচেতন করবেন।
অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া নারীদের বেশি হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলে জানান জনপ্রিয় মডেল জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে বাজে ভাষায় কথা বলে। আমি কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে তাদের কোন ক্ষতি করা না।’ এরপরই ‘নারীদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে নারীরা আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাবে‘- যোগ করেন পিয়া।
ভ্লগার ইফতেখার রাফসান বলেন, আপনার ভালো না লাগলে আমাদের ভিডিও না দেখতে পারেন । কিন্তু খারাপ কথা বলা উচিত না। খারাপ কথা শোনার পর অনেকে আর কনটেন্ট তৈরি করতে সাহস দেখায় না। একইসঙ্গে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন রাফসান।
এক প্রশ্নের জবাবে লাইফস্টাইল ইনফ্লুয়েন্সার ফাইজা বলেন, ‘খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে আমি আমার দেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের মাঝে। আমি যখন কনটেন্ট তৈরি করা শুরু করি তখন বিষয়টি ছিলো আরও কঠিন। তাই নিজের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
তবে কন্টেন্ট তৈরির সময় এটি প্রকাশের পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকাটাও কন্টেন্ট নির্মাতাদের দায়িত্ব বলে সবাইকে সমালোচনা সহ্য করে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
একপর্যায়ে আয়মান সাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনপ্রিয় বাংলাদেশি টিকটকারের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। জনপ্রিয় টিকটকাররা জানান, মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই তারা কাজ করেন। সেজন্য একেকজন একেক রকম স্ট্যাইল নিলেও তারা জীবযাপনে সৎ। কিন্তু অনেকেই না বুঝেই তাদেরকে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেন। এর ফলে তাদের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। তারা অনেক সময় আঘাত পেয়ে বেশ কিছুদিন ট্রমার ভেতর থাকেন।
অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পর জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া বললেন, শুধু খাই-দাই, কেনা-কাটা বা লাইফস্ট্যাল কন্টেন্ট নয়; শেখার মতো বিষয়েও কন্টেন্ট তৈরি করা উচিত। সৃজনশীল কন্টেন্ট এই শিল্পকে আরো উঁচুতে নিয়ে যাবে। সে জন্য কন্টেন্ট নির্মাতাদের আরো বেশি সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে টিকটক পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভিডিওনির্ভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন মাধ্যমের ছয় তরুণ তারকা। তাদের মাধ্যমেই টিকটকের নিরাপত্তা বিষয় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে সাধারণ মানুষের কাছে। এ উদ্যোগের আওতায় ব্যবহারকারীদের কাছে টিকটক অ্যাপের বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরার পাশাপাশি অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে টিকটক বাংলাদেশে সেফটি অ্যাম্বাসেডর কর্মসূচি চালু করেছিল। সে সময় টিকটকের সেফটি অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন অভিনেতা-গায়ক তাহসান খান ও অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা।