বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করার আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে (শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগ) `এসবিএইচএসএল ১৬+১৭’ নামে একটি গ্রুপ খুলেছিলেন। হত্যার আগে ও পরে এই গ্রুপেই তারা একে অপরের সঙ্গে বার্তা বিনিময় করেছেন।
গ্রুপটি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেরেবাংলা হলের ১৫ ও ১৬তম ব্যাচের নেতাকর্মীদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো বলে জানা গেছে।
হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারের এই কথপোকথন থেকে দেখা গেছে, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবীন (গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন) গত শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে নির্দেশ দেন। এজন্য তিনি গ্রুপ সদস্যদের দুইদিনের সময় দেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও এই গ্রুপে একে অপরের সঙ্গে আলাপ করেন হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীরা।
ফাঁস হওয়া এই ম্যাসেঞ্জার বার্তাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।
কথপোকথন:
শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে এই গ্রুপে বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবীন লেখেন, ‘১৭-র আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম।’
জবাবে ১৬তম ব্যাচের মনিরুজ্জামান লেখেন, ‘ওকে ভাই।’
মেহেদী তখন আবার লেখেন, ‘দুই দিন টাইম দিলাম।’
মনিরুজ্জামান উত্তরে লেখেন, ‘ওকে ভাই।’
এরপর মেহেদী ‘দরকারে ১৬ ব্যাচের মনিরের সঙ্গে কথা বলিস। ও আরও কিছু ইনফো দিবে শিবির ইনভলমেন্টের ব্যাপারে।’
রবিনের নির্দেশ পাওয়ার পরদিন রবিবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে মনির গ্রুপে লেখে, ‘নিচে নাম সবাই’।
এরপর শাহীন লেখেন, ‘ওকে ভাই।’
শওকত লেখেন, ‘ওকে ভাই।’
আবু নওশাদ সাকিব লেখেন, ‘আবরার ফাহাদ কী হলে আছে?’
জবাবে শামসুল লেখেন, ‘হ ভাই। ২০১১ তে’। তখন নওশাদ লেখেন, ‘২০১১ তে আছে।’
এরপরই রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরার ফাহাদকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় তানিম, বিল্লাহ, অভি, সাইফুল, রবিন, জিওন ও অনিক। যা শেরেবাংলা হলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
এরপর রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘এসবিএইচএসএল ১৬+১৭’ গ্রুপে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা লেখে, ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে’। জবাবে শামসুল ও সজীব জানায়, ‘২০১১-তে আছে।’
মেসেঞ্জারে অন্য আরেকটি কথোকথনে অমিত সাহা লিখেছে, ‘আবরার ফাহাদরে ধরছিলি তরা?’। ইফতি জবাব দেয়, ‘হ’।
আবার প্রশ্ন করে অমিত, ‘বের করছোস?’ জবাবে ইফতি পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘কি হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি’। এবার অমিত লেখে, ‘স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।’
এরপর ইফতি জবাব দেয়, ‘মরে যাচ্ছে; মাইর বেশি হয়ে গেছে’।
জবাবে অমিত সাহা লেখে, ‘ওওও বাট তাকে তো লিগ্যালি বের করা যায়’। এরপর একটি ইমোজি পাঠায় ইফতি। পরে এই দুজনের আর কোনও কথোকথন পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার সহপাঠীরা বলছেন, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার এক নেতাও স্বীকার করেছেন, আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও মারধরের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান।