আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা সিংড়া দিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হলো ডিজিটাল সেন্টারের বর্ষপূর্তী অনুষ্ঠান। জাতীয় সঙ্গীত- গর্জে ওঠো আবারো গানে শিশু নৃত্য পরিবেশন আর উদ্যোক্তা সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা পায় এই অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশ ভারত ডিজিটাল সেবা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বিডিসেট সেন্টার, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং হার পাওয়ার প্রকল্পের প্রশিক্ষণের ওরিয়েন্টশন উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সেবা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রস্থাপন প্রকল্প পরিচালক আমিরুল ইসলাম সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মাজেদুল ইসলাম, সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সিংড়া পৌর চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের হাতের নাগালে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। গ্রামে বসে মানুষ ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করছে। মানুষ কখনো ভাবতে পারেনি, গ্রামে বসে জমির খাজনা, খারিজ, ট্যাক্স, বিল প্রদান করছেন। যে কাজগুলো তিন মাস সময় লাগতো, তা এখন কয়েক মিনিটে করা যাচ্ছে।
দেশের প্রান্তিকে জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিকবান্ধব প্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দেওয়ার এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই অধীন ডিজিটাল সেন্টারের ১৩তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে নাটোরের সিংড়া উপজেলা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং সিংড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক মো: মামুনুর রশীদ ভূঞা, নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, পিপিএম, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্প এর উপপ্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) জনাব মোঃ মোখতার আহমেদ এবং বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সেবা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একেবারে গ্রাম থেকে প্রযুক্তি সেবাদানের উদ্যোগ নেন। প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তি সেবার বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে ডিজিটাল সেন্টার। নারী ক্ষমতায়নকে গ্রাম পর্যায়ে সমুন্নত করে ডিজিটাল সেন্টারে একজন পুরুষের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ৯৩৯৭টি ডিজিটাল সেন্টারের ১৭ হাজার ৮০০’র অধিক নারী-পুরুষ উদ্যোক্তা ৩৮৫টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি সেবা নাগরিককে সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন।
প্রতিমাসে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৭৫ লাখেরও বেশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা এ পর্যন্ত নাগরিকদের ৭৮ দশমিক ১৪ শতাংশ সময়, ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ব্যয় ও ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ যাতায়াত সাশ্রয় করেছেন।
দেশ ছাপিয়ে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা কুড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের রোল মডেল হবে ডিজিটাল সেন্টার। এই মডেল শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত। বাংলাদেশের এই মডেল অনেক দেশই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ফিলিপাইনের বাংসোমারো প্রদেশে আমাদের ডিজিটাল সেন্টারের আদলে ১০৫টি ওয়ান স্টপ সেন্টার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছি। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা, কম্বোডিয়াতেও ক্রস বর্ডারের মাধ্যমে এই মডেল রেপ্লিকেট করতে কাজ চলমান আছে।
গ্রামের কোণায় কোণায় প্রযুক্তিসেবা নিশ্চিতে এরই মধ্যে ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে ১ হাজার ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সেবা থেকে যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে সে লক্ষ্যে ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করছি। শুধু তাই নয়, আগামী বছরের মধ্যে এখান থেকে ২০ লাখ তরুণকে স্মার্ট স্কিলস প্রদান ও কর্মসংস্থানের আওতায় নেব। এ ছাড়াও নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে স্মার্ট সিটিজেন তৈরির পাশাপাশি স্মার্ট গ্রাম বিনির্মাণে কাজ করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক মো: মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, ডিজিটাল সেন্টার গ্রামীণ অর্থনীতির হাব হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। যারা প্রবাসে আছেন তাদের কথা বিবেচনায় রেখে এরই মধ্যে আমরা ২০২৪ সাল নাগাদ সারাদেশের সকল ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে প্রবাসী হেল্প ডেস্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০টি দেশে এক্সপ্যাট্রিয়েট ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করব। সব সেন্টার থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের স্মার্ট সেবা দেওয়া হবে। এসব সেবার সংখ্যা ৩৮৫ থেকে ৫০০-তে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার।
আইসিটি বিভাগের হার পাওয়ার প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক নিলুফা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্বাচিত সেরা নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। জেলার সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে একজন করে নারী-পুরুষ উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া সাতটি উপজেলা থেকে একজন করে সেরা উদ্যোক্তাকে (নারী/পুরুষ) পুরস্কৃত করা হয়।