টাওয়ার শেয়ারিং নিয়ে সেবা বিনিময় চুক্তি করেছে বেসরকারি টেলিকম অপারেটর বাংলালিংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনস্থ বিটিসিএল প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিটিসিএল-এর নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ব্যবহার করবে বাংলা লিংক।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন এবং বাংলালিংক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আজ এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সত্যিই একটা মাইল ফলক। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে টিএন্ডটির যাত্রা শুরু এবং ১৯৭৩ সালে আইটিইউ এর সদস্য পদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের যাত্রা শুরু হয়। বিটিটিবি ছিল একসময় এদেশের টেলিযোগাযোগের মেরুদণ্ড। আমি আশা করি উদ্যোগটি বাংলালিংক-এর ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সহায়তা করে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, এর ফলে শক্তি সাশ্রয়ের পাশাপাশি জাতীয় সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় জাতীয় অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন ইতোপূর্বে এদুটো প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল ফাইবার অবকাঠামো শেয়ার করেছে । বিটিসিএল যেমন তার রিসোর্স শেয়ার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তেমনই বাংলালিংক সেই রিসোর্স ব্যবহার করে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হচ্ছে।
ক্ষতি পুষিয়ে বিটিসিএল এর ঘুরে দাঁড়ানোয় সংস্থাটির প্রধানের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ল্যান্ডফোনে মানুষের কথা বলা কমে যাওয়ার কারণে এর গ্রাহক কমে যাওয়ায় বিটিসিএল ৪/৫ বছর আগেও বছরে ৪০০ কোটি টাকা লস করেছে। আর এখন লাভের মুখ দেখছে। মানুষ এখন আমাকে বলছে, তার এলাকায় টেলিফোন সংযোগ দরকার; সাথে একটা জিপন ইন্টারনেট চাই। প্রযুক্তি ও পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারায় বিটিসিএল আজ ঘুরে দাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার তার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব থাকাকলীন সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ও বিটিসিএল এর এই ঘুরো দাঁড়ানোকে অভিনন্দিত করেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময়েই অবকাঠামো শেয়ারিংকে স্বাগত জানাই। বাংলালিংক ও বিটিসিএল এর দৃষ্টান্ত অন্যেরা অনুসরণ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
বিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন এ চুক্তির বিষয়ে বলেন, গত বছর থেকে আমরা বাংলালিংক-এর সাথে আমাদের ফাইবারও শেয়ার করে আসছি। উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি ইতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে। এখন দেশ এমন একটি সময় পার করছে যখন জাতীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবকাঠামো ভাগাভাগি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
বাংলালিংক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সবসময় নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের সুযোগকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে যেমন গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব, তেমন সম্পদ ও অবকাঠামোর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। গত এক বছরে আমরা নেটওয়ার্কে ৩৩০০টিরও বেশি বেইজ স্টেশন যোগ করেছি।