নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে অ্যাকটিভ শেয়ারিং করা যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘নেটওয়ার্ক উন্নয়নে অবকাঠামো ভাগাভাগির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই জানিয়েছেন মন্ত্রী।
টেবিলটকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, একটিভ শেয়ারিং জরুরি বিষয়। এটাকে প্যাসিভ শেয়ারিংয়ের ভেতরে রাখলে যে সুবিধা তা পাওয়া যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি এই নীতিমালা দ্রুত করবো। যতদিন নীতিমালা চূড়ান্ত না হবে ততদিন বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে একটিভ শেয়ারিং করা যায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহকের পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবণতা হলো তারা গ্রাহক বাড়াতে চায়। কিন্তু সে তুলনায় সেবার মান বাড়াচ্ছে না। তারা মনে করছে যেরকম সেবাই তারা দিক গ্রাহক চিরদিন তাদের কাছে থাকবে। মান না বাড়ালে বিলীন হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
অপারেটরদের নিজেদের স্বার্থে মান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সংসদে গেলেই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন শুনতে হয়- কল ড্রপ কেন? নেটওয়ার্ক থাকে না ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, টাওয়ার কোম্পানি শেয়ারিংটা শতভাগ হতে হবে। টাওয়ার যেন চারটি কোম্পানি ব্যবহার করতে পারে।
ব্যয় কমাতে অবকাঠামো ভাগাভাগি জরুরি উল্লেখ করে অপারেটরদের উদ্দেশ্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম মোবাইল ফোন মানসম্মত সেবা। গ্রাহক বাড়ানো হবে কিন্তু গ্রাহক সেবা পাবে না। সেটা হবে না। ভালো সেবা দিতে না পারলে শীর্ষস্থান থেকে খসে পড়বেন। কোনও অবস্থাতেই গ্রাহক ধরে রাখতে পারবেন না যদি সেবার মান ধরে রাখতে না পারেন। সেবার মান বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। ব্যবসা করেন বা গ্রাহক বাড়ান তাতে কোনও আপত্তি নেই। মানসম্মত সেবা দিতে না পারলে টিকে থাকা যাবে না।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিনের সঞ্চালনায় বৈঠকে টেলিকম বিশেষজ্ঞ টিআইএম নুরুল কবির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমাদের টেলিকম সেবাদাতাদের কেউ কেউ মার্কেট সাইজ বড় করার পক্ষে মনোযোগী, কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বেলায় ততটা নন। তবে আমাদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস (মানসম্মত সেবা) নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামো ভাগাভাগিতে গ্যাপ কোথায় তা দেখতে হবে। শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অপারেটরদের অনীহা আছে, কিছুটা সমন্বয়হীনতাও আছে। বিটিআরসি গার্ডিয়ানশিপ নিতে পারে। সাশ্রয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতে সাশ্রয় করতে গেলে শেয়ারিং মাস্ট।
বৈঠকে টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন আহমেদ, বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন, ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিকি স্টেইন, গ্রামীণফোন হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংক) চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ফাইবার অ্যাট হোম ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী, রবি’র স্পেকট্রাম অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেগুলেশন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অনামিকা ভক্ত ও অর্থনীতিবিদ ও গবেষক মঞ্জুর হোসেন বক্তব্য রাখেন।
অপারেটরদের পক্ষ থেকে বাংলালিংক-এর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন,“সব অপারেটরের জন্য টাওয়ার শেয়ারিং অতি শীঘ্রই বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে আমি মনে করি। দেশের বর্তমান জ্বালানি সংকটে আমাদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যদি যৌথভাবে অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারি, তাহলে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শক্তির সঠিক ব্যবহার হবে। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি টাওয়ার শেয়ারিং দ্রুত বাধ্যতামূলক করার জন্য, যাতে সব পক্ষ এই ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হতে পারে।“
গ্রামীণফোনের সিসিএও হোসেন সাদাত বলেন, গত চার বছরে টাওয়ার শেয়ারের জন্য কোনো অপারেটরের পক্ষ থেকে অ্যাগ্রিমেন্টের প্রস্তাব করা হয়নি। অ্যাগ্রিমেন্ট না করতে পারলে কোনো অপারেটরকে শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দোষারোপ করা ঠিক নয়।
রবির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) অনামিকা ভক্ত বলেন, গত চার বছরে অপারেটরদের টাওয়ার শেয়ার করা যায়নি। তারা দুই অপারেটরকে প্রস্তাব দিলেও একটি অপারেটর থেকে ফিডব্যাক পেয়েছেন। অপারেটরদের কোন কোন টাওয়ার শেয়ার করা যায়, তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষক মঞ্জুর হোসেন বলেন, নেটওয়ার্ক শেয়ারিং এর ফলে অপারেটরের খরচ যেমন কমবে, পাশাপাশি তারা মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন।