সিম আপগ্রেডেশনে ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে ওটিপি ব্যবহারের মতো বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে রোববার (২৯ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় এই নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। নিবন্ধিত থ্রিজি মোবাইল সিম যারা আপগ্রেড করে ফোরজি সেবা নিতে পারছেন না তাদের জন্য উপায় বের করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে অগ্রসর হাওয়া আহ্বান জানান তিনি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, একটা অদ্ভুত ডাটা আমার কাছে এসেছে, আমাদের যারা সিম ব্যবহার করি তার ১৫-২০ শতাংশ আপগ্রেড করার ক্ষমতা পায় না। তার কারণ, যার নামে সিমটা নিবন্ধন করা আছে সে লোক হয়তো বিদেশে থাকে। বউয়ের জন্য একটা সিম কিনে দিয়ে গেছেন। এখন তার তো আর ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া যায় না। সিমও আপগ্রেড করা যায় না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এগুলোর ক্ষেত্রে বিটিআরসি একটা বিষয় চিন্তা করতে পারে। ওটিপি দিয়ে বা কোনোভাবে একটা পদ্ধতি তৈরি করা যায় কিনা, যাতে সিম আপগ্রেড করা যাবে। কারণ, সিম আপগ্রেড করতে না পারলে তো টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারবে না। সেই দিক থেকে আপনারা (বিটিআরসি) একটা পথ বের করবেন। এখন ফোরজির জন্য চাহিদা যাচাই করার দরকার নাই। এই মুহূর্তে ফোরজির প্রধান সঙ্কট ডিভাইস এবং সিম আপগ্রেড করতে না পারা। এগুলোর সমাধান আগে করতে হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে আমরা টেলিযোগাযোগ খাতের যে অগ্রগতি দেখি তার সূচনা হয় ১৯৯৭ সালে। সে সময় মোবাইল অপারেটরের হাত ধরে আমরা টুজি মোবাইল ফোনের যুগে প্রবেশ করি। বর্তমানে ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার প্রবেশের মূলে ছিল ১৯৯৮ সালে সরকার কর্তৃক প্রযুক্তি সামগ্রীর ওপর থেকে ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফের সুফল।
বেসরকারি খাতেও সাবমেরিন ক্যাবল লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি টেলিকম বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নিচ্ছে এবং আরো ১ টেরাবাইট ব্যান্ডউইডথ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নিচ্ছে এবং আসাম ও মেঘালয় রাজ্য বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কোনো ব্যান্ডউইডথ সংকটে পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিনে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
প্রযুক্তির কারণে চিকিৎসা সেবায় অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, করোনা মহামারীতে মানুষ ঘরে বসে টেলিমেডিসিন তথা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে। আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে ডিজিটাল সংযোগ প্রদান করা। আমরা ৫জি সম্প্রসারণ করবো । শুধু তরঙ্গের মাধ্যেম মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া যাবে না, এজন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবলে যুক্ত হতে হবে। ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। অপারেটরদেরকে মানসম্পন্ন ৪জি সেবা বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৫জি আমাদের যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে ধাপে ধাপে চালু করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মতিন বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল সেবা চালুর পর গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করতে পারলেও সিমের ‘মালিকানা জটিলতায়’ ব্যবহারকারীর অনেকেই ফোরজি সেবা আপগ্রেড করতে পারছেন না। তাই চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল সেবাও নিতে পারছেন না তারা।