ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, তিন বছর আগেও বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় অংশ মোবাইল অপারেটরদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেই জায়গা এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারীরা দখল করে নিয়েছে। কেননা মোবাইল ইন্টারনেট একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা, প্রচলিত যে সেবাগুলো আমাদের অপারেটররা দেয় এগুলো মানুষের চাহিদা পূরণ করার মতো জায়গা নয়। এক সময় মানুষ কেবলমাত্র ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটই ব্যবহার করবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রসারের ফলে আগামী ২ বছরের মধ্যে পৃথিবী হবে ডাটা নির্ভর। প্রচলিত মিডিয়ার জায়গা দখল করে নিবে ডিজিটাল মিডিয়া।
তিনি আরও বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে গ্রাহকের আগের যে ব্যান্ডউইথ চাহিদা ছিল, এখন তাতে হয় না। এখন মানুষ বেশি বেশি স্পিড খুঁজে। এখন আমরা কথা বলি এমবিপিএস, ভবিষ্যতে আমরা বলব জিবিপিএস। আর তা ব্রডব্যান্ড থেকে মানুষ সহজেই পাবে এবং তার ঘরে ঘরে পাবে।
শনিবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেবলমাত্র ব্যবসাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যখন স্যাটেলাইটের যুগে পৌঁছেছি পৃথিবী তখন জেনেছে বাংলাদেশ এখন আর তলাহীন ঝুঁড়ির দেশ নয়। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে সম্প্রচার চালাতো তা দেশে নিয়ে আসা। সেটা আমরা শতভাগ সফলতার সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছি।
মাত্র ৩ বছর ৮ মাস সরকারের দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সারা দুনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে স্যাটেলাইট সংযোগের লক্ষ্যে ভি স্যাটের জন্য ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উপস্থাপন করেন। শব্দ উচ্চারণ না করলেও তিনিই ডিজিটাল বাংলাদেশেল বীজ বপন করেন। সেই বপন করা বীজ থেকে বিশ্বে প্রথম একটি দেশকে ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত ২০১৪ সালে, পাকিস্তান ২০১৯ সালে ডিজিটাল বললেও এর কোনটিই দেশকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করেনি।
মোস্তফা জব্বার বলেন, করোনার কারণে দুই বছর সব দেশের দরজা বন্ধ ছিল। আমি বিদেশের বাজারে যে যাব সেই সুযোগটা ছিল না। ২০২৫ সালের এস্টিমেট ছিল উৎক্ষেপণের বাণিজ্যিক ব্যবহার, আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ, পুরো প্রক্রিয়ার ভেতরে ছিল কিন্তু আমি তো থমকে দাঁড়িয়েছি। তবে করোনার সময়টা অতিক্রান্ত হয়েছে, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি আমাদের আর কোনো রকমের ক্রাইসিস হবে না।
কলড্রপ সমস্যার ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ কলড্রপের সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে এবং ২০২৩ সালে পুরোপুরি সমাধান হবে। সেই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাইভ-জি সেবা পুরোপুরি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইন্টারনেটে ‘এক দেশ এক রেট’ এবং ডেটা সেবায় ‘আনলিমিটেড ও ট্যারিফ প্যাকেজ’ নির্ধারণ উদ্যোগ বিষয়ে বিটিআরসি’ সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসিম পারভেজ বলেন, আমরা যাই করেছি তাতে সরকারের কোনো লাভ হয়নি। জনগণের লাভ হয়েছে। কেননা জনগণের জন্য সরকার। এছাড়াও (ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের মাধ্যমে) এই খাতে যদি ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকলেও জনগণের জয় হয়েছে। আজ আমাদের জয়যাত্রা সূচিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, দেশজুড়ে যেনো রাজনৈতিক, অ-রাজনৈতিক পেশী শক্তি মুক্ত ইন্টারনেট সেবা দিতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, লাইসেন্স ছাড়া যেনো কেউ ব্যবসায় করতে না পারে এ জন্য আমরা মন্ত্রী মহোদয় এবং বিটিআরসির সহযোগিতা চাই। পাশাপাশি মন্ত্রী মহোদয় ও বিটিআরসি’র সম্মানে আমরা বাধ্য হয়েই এক দেশ এক রেট বাস্তবায়ন করছি। এজন্য এনটিটিএন-দের সহযোগিতা চাই। বড়রা যেন ছোটদের খেয়ে না ফেলে সে জন্য সরকারের নীতিগত সহযোগিতা চাই।
আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া তার বক্তব্যে ইন্টারনেট সেবা দিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের খাম খেয়ালীপনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপে যদি আমাদের আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে যেতে হয় সেটা আমাদের জন্য লজ্জার।
এর আগে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, ময়মনসিংহ শাখার একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। স্বাক্ষাতকালে তারা ময়মনসিংহে একটি কম্পিউটার সিটি প্রতিষ্ঠাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন। ময়মনসিংহের আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার প্ররিচালিকা শিখা হাসান ও শিক্ষিকারাও মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে করোনাকালে শিক্ষাখাতের বিপর্যয় সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। মন্ত্রী ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগের সেবা প্রতিষ্ঠান ডাক, বিটিসিএল ও টেলিটকের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন ও তাদের সেবার মান বাড়ানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবি জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, মো. আনোয়ারুল আজিম, যুগ্ম-মহাসচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম রাশেদ ও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসে, কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান এবং পরিচালক মো. জাকির হোসাইনসহ কার্য নির্বাহী কমিটির অপর সদস্যরা।