২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত ক্লাসরুমের বাইরে রয়েছে। অনলাইনে কিছু শিক্ষার্থী পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষক ও ক্লাসরুম থেকে দূরে থাকায় পড়াশোনা ব্যহত হচ্ছে। এই অবস্থাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ইএমকে সেন্টারের স্মল গ্র্যান্টের আওতায় একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়। যেখানে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে ক্লাসরুমে ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষাকে সহজ করা বিষয়ক শিক্ষকদের দুইটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২১-২৩ আগস্ট দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির সিলেবাস নিয়ে এই ওয়ার্কশপে আলোচনা করা করা হয়। শিক্ষকেরা দলীয়ভাবে ক্লাসরুম ডেলিভারি কীভাবে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত করে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায় তার জন্য প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে প্রচলিত পদ্ধতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা ও শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কীভাবে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে দেওয়া যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করেন।
ওয়ার্কশপে অংশ নেয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে ঝিনাইদাহের সদরের আল-হেরা ইসলামী ইন্সটিটিউটের শিক্ষিকা মোসা: খুরশিদা আকতার জানান, বর্তমান সিচ্যুয়েশনে আমাদের শিক্ষকদের জন্য এইরকম ওরার্কশপ খুবই প্রয়োজন ছিল। স্কুল খুললে এই ওয়ার্কশপের আইডিয়াগুলো আমি আমার শিক্ষার্থীদের মাঝে সফল ভাবে প্রয়োগ করব।
গত ২৩ আগস্ট বিকাল তিনটায় ওয়ার্কশপের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের খুব মান্য করে। তাদেরকে উৎসাহ দিলে বা একটু সাহায্য করলে তারা পড়াশোনায় খুব ভালো করে। তিনি শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার আহবান জানান। এছাড়া প্রজেক্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা কোভিড পরবর্তী ক্লাসরুমের অবস্থাকে সমস্যা হিসেবে নির্দেশ করেছে আবার ওয়ার্কশপ করে সমাধান করার জন্য চেষ্টা করেছে। এমনকি কিছু গুরুত্বপুর্ন ফাইন্ডংসও বের করেছেন। সরকারের উচিত এই সমাধানগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা। এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-প্রশিক্ষক-স্বেচ্ছাসেবকদের কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (VAB) এর সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জসিমুজ্জামান। তিনি বলেন, ওয়ার্কশপে যেসব আইডিয়া বের হয়েছে, সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া এই আইডিয়াগুলোর মত অন্যান্য বিষয়েও নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন করতে হবে। তাহলেই পরবর্তীতে ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের শেখানো সম্ভব হবে।
এখানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইএমকে সেন্টারের ডিরেক্টর আসিফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর পরে যেসব পেশা আমাদের চারপাশে থাকবে সেগুলোর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে আমাদের বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার দিকে জোর দিতে হবে। আমি শিক্ষকদের আহবান জানাই, আপনারা শিক্ষার্থীদের তৈরি করবেন। এছাড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহ সভাপতি মুনির হাসান বলেন, স্কুল খুলে দিলে শিক্ষার্থী অল্প সময়ে কীভাবে পড়াশোনাটা গুছিয়ে আনতে পারে, সেই পথটা আমরা এই প্রজেক্টে বের করার চেষ্টা করেছি। ক্লাসরুমে দুই থেকে ছয় মাস সময় পেলে কীভাবে বিজ্ঞান ও গণিত শেখানো যায় তার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এই প্রজেক্টের ফাইন্ডিংসগুলো একত্র করে সরকারের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
এর আগে গত মে মাসে এই প্রজেক্টের আওতায় প্রথম ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শিক্ষকরা খুঁজে বের করেন পরবর্তিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ফিরে এলে বিজ্ঞান শিক্ষায় কী কী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। সেসব থেকে ক্ষতি কমিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের শিখনফল সর্বোচ্চ কতটুকু অর্জন করা যায়, সেটি নিয়ে শিক্ষকরা পর্যালোচনা করেন। একই সঙ্গে পরবর্তী ক্লাসের জন্য বিজ্ঞান ও গণিত সিলেবাস সংক্ষিপ্ত আকারে এমনভাবে তৈরি করেন। যেন কোভিড পরিস্থিতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটুকু কমিয়ে এনে শিক্ষার্থীকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এই ওয়ার্কশপে দেশের প্রান্তিক এলাকার ৩৬ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের পাঁচটি স্কুল, ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ৫টি স্কুল ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত ২০ টি স্কুলের শিক্ষকেরা এই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।