স্মার্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির সম্ভাবনার দুয়ার খোলার আলোচনায় শিক্ষাবদিদের অন্তর্ভূক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, অবশ্যই আমাদের সরকার-ব্যবসায়ী এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এ “Accelerating the Trillion Dollar Journey: Harnessing the Digital Economy to Unlock New Frontiers for a Smart Bangladesh” শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। বিশেষ অতিথি হিসেবে এই প্লানারি শেসনে কি-নোটও উপস্থাপন করেছেন তিনি।
২০৪১ সালের মধ্যে আমরা হবো মেধা নির্ভর অর্থনীতির দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যবসায় পরিবেশ তৈরির সুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, বিকাশ এখন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়ালে চ্যাম্পিয়ন, সবার হাতেই এখন একটা করে মোবাইল আছে। বাংলাদেশে এখন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। কোভিডে ই-কমার্স বাণিজ্যের লাইফলাইনে পরিণত হয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য ইনোভেশন ইকো সিস্টেম গড়ে তোলা। কৃষি, পোশাক ও প্রবাসী আয়ই ছিলো এতোদিন আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু এখন শ্রমনির্ভর থেকে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছি। আমরা মনে করি, ওই সময়ের মধ্যে আমাদের উদ্ভাবক ও তরুণ উদ্যোক্তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দাতা হবে। সমস্যা না দেখে আরো সমস্যার সমাধানকারী তৈরি করবো। সবশেষে আমরা স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম গড়ে তুলবো। এভাবেই ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা হবো মেধা নির্ভর অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ হবে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ।
ট্রিলিয়ন ডলার জার্নি নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপি’র আকার ৮৬৮ বিলিয়ন ডলার। আমাদের লক্ষ্য এখন এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছা। এজন্য আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে একটা স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম গড়ে তুলবো। প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ৫ হাজার স্টার্টআপ। এই স্টার্টআপগুলো ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে গড়ে উঠবে ৫টি ইউনিকর্ণ।
কীভাবে হবে তার সরল অংক কষে পলক বলেন, গত ৫ বছরে ৭০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। গত ৬ বছরে ২৫০০ স্টার্টআপ সাড়ে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এই অংক মিলিয়ে নিলে ৭০ লাখ উদ্যোক্তার প্রত্যেকে গড়ে ৬ জনের চাকরি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু একেকটি স্টার্টআপ ৬০০ জনের বেশি জব সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলে ২০৪১ সলের মধ্যে এই খাত থেকে ২০ শতাংশ জিডিপি আয়ে সক্ষম হবো।
আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আইটি ও আইটিএস খাতই ভবিষ্যৎ। রপ্তানির জন্য শুধু কোনো একটি খাতের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশের সব খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অনেক। সরকার এই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে নানা ধরনের নীতি গ্রহণ করছে।
অধিবেশনে ফিনটেকের কল্যাণে দেশের সব শ্রেণির মানুষই এখন টাকা জমা রাখার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির। তিনি বলেন, এই সুযোগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, তা পূরণ করতে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি সহায়ক নীতিমালাও লাগবে। এ ছাড়া ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মতো পরিবেশও তৈরি করতে হবে। তাহলেই প্রযুক্তিভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়র্গেন সি. অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ জানান, বাংলাদেশ টেলিকমের অন্যতম বড় বাজার হলেও এখানে মোবাইলপ্রযুক্তিতে জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দুটিই দরকার হবে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য। টেলিনরের জন্য বাংলাদেশ সব সময়ই প্রাধান্যের তালিকায় আছে। এখানে বিনিয়োগও অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশে ফাইভ–জি বাস্তবায়নে পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বিবেক সুদ। তিনি বলেন, নীতির ওপর বিনিয়োগ নির্ভর করে। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য ডিজিটাল শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে।
দারাজের গ্রুপ সিইও বিয়ার্কে মিকেলসেন গত পাঁচ বছরে ডিজিটাল কমার্স খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধেরে বলেন, অবকাঠামো থেকে শুরু করে ভোক্তাসহ একটা ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে।
আলোচনার সার সংক্ষেপে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এখানে বিনিয়োগের রয়েছে অপার সম্ভবনা। আর প্রযুক্তি খাতই নেতৃত্ব দেবে স্মার্ট বাংলাদেশকে।
মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বের শেষ ধাপে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সৈয়দ আলমাস কবির, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন।