একটি মেইল পাঠাতে সময় লাগতো ১০ মিনিট। এখন আছে ব্রডব্যান্ড সংযোগ। সেই সংযোগ পেয়ে গত সাত মাসে ৪৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেছে থরমা কৃষ্ণা দেও। তার মতোই ফুলবাড়ি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এভাইবেই ইনফো সরকার প্রকল্পের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে হচ্ছে আয়। চলছে সংসার।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আইসিটি বিভাগের ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে সেই গল্পগুলো তুলে ধরলেন তারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অংশীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. মুশফিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত চীনের রাষ্ট্রদূতকে গ্রামকে শহরে রূপান্তরে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় দেয়ার অনুরোধ জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। একইসঙ্গে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং-কে এ দেশেই হুয়াওয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন সেন্টার স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।
পলক বলেন, ২০১৭ সালে ইনফো সরকার ৩ প্রকল্প স্থাপন ছিলো চ্যালেঞ্জের। তবে সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার অ্যাট হোম এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় আজ একনেক বৈঠকের আগে তিনি আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পলক আরো বলেন, আমরা যদি আমাদের গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, আধুনিক সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রদান করতে পারি তাহলে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর বা স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমাদের ৫টি মৌলিক চাহিদা যদি তারা পায় তবে তারা তাদের গ্রামে থাকতেই খুশি হবেন। আমি মনে করি আমরা যদি আইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের শহর ও গ্রামীণ জীবনের আধুনিকীকরণ বাস্তবায়নের জন্য উভয় সরকারের অনুমোদন পেতে পারি তাহলে আমরা সত্যিই আমাদের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব আধুনিক সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের শক্তিতে ইউডিসিগুলো প্রান্তিক মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে মন্তব্য করে এজন্য প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বরিশাল বিভাগের জেলাপ্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার।
প্রধান অতিথির বক্তেব্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের মধ্যে কানেক্টিং সিটিজেন স্তম্ভটির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইনফো-সরকার ফেজ-৩ প্রকল্পটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) উদ্যোক্তারা দুই ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে একটি হল পাবলিক সার্ভিস যেমন: পর্চা, পাসপোর্ট আবেদন, এনআইডি, মিউটেশন, জন্ম ও মৃত সনদ, অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি এবং অন্যটি হলো বেসরকারি সেবা যেমন: এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, রেমিট্যান্স বিতরণ, পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজ ইত্যাদি। এসকল সেবা প্রায় ২৬০০ ইউনিয়নের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে এই প্রকল্প থেকে উদ্যোক্তাদের বিনামূল্যে ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে, যার ফলে গত ১৩ বছর ধরে গ্রামীণ জনগণকে প্রায় ৮০ কোটি সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। ইনফো-সরকার ফেজ-৩ নেটওয়ার্ক থেকে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিস সহ গ্রাম পর্যায়ে ১,০৯,২৪৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ৬০ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকার প্রায় ১০ কোটি মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় এসেছে।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনফো-সরকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার।
এছাড়া, অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিআরআইজি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুওয়া ওয়ে এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং।
অনুষ্ঠানে ইউডিসি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঢাকায় পারুল শিকদার, রাজশাহী মাহমুদুল হাসান, বরিশালে মোছাঃ রোজিনা আক্তার, রংপুর বিভাগে মুনমুন নাহারকে সেরার সম্মাননা দেয়া হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগে সেরা ফ্রিল্যান্সার সিলেট বিভাগে ফয়জুন আহমেদ, চট্টগ্রাম থেকে তারেক মাহমুদ, বরিশাল থেকে এস এম জাকির হোসেনকে পুরস্কৃত করা হয়।
এডিএন গ্রুপ চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ, ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী ও সামিট কমিউসিকেশন চেয়ারম্যান ফরিদ খানকে ক্রেস্ট দেয়া হয়।