‘জানুক সবাই দেখাও তুমি’ স্লোগানে দেশের সকল জেলার খুদে প্রোগ্রামারদের অংশগ্রহণে শেষ হলো ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার এ বছরের জাতীয় পর্ব। প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও ৪৪৪ উপজেলা থেকে ১১ হাজার ৬৯৩ জন শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টাব্যাপী এ প্রোগ্রামিং এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থীই মেয়ে।
শুক্রবার বিকেলে অনলাইনে এ প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা এবং সমাপনীপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, ডিজিটাল বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে আমাদের মেধাবী তরুণরা। যদি তাদের আমরা সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই এবং তাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল বিশ্বের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই; তাহলে ঠিক আবশ্যিক ভাবেই আমাদের প্রোগ্রামিং তথা কম্পিউটারের ভাষাটা আমাদের শেখাতে হবে। তারপর যার যার মেধা-যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে তার তার অবস্থান ও স্বপ্নগুলো পূরণ করবে। কিন্তু ন্যূনতম ভাবে যদি আমরা তাদের প্রোগ্রামিং শেখাতে না পরি, তাহলে কিন্তু তাদের অনেক বড় স্বপ্ন পূরণের সুযোগটা আমরা তাদের দিতে পারবো না। ”
আর এই স্বপ্ন পূরণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ভাষা জানা থাকলে পৃথিবীর সব ভাষাতেই যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়াও কিছুদিন পর যখন ড্রাইভারলেস গাড়িগুলো চলবে তখন এগুলো চালানোর জন্য প্রোগ্রামিং জানতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বুয়েটের সহযোগিতায় আমরা ৯ ধরণের ভাষা শেখার জন্য আমরা ‘ভাষাগুরু’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি। তার মানে এখন ভাষা না শিখেও আপনি যদি সফটওয়্যার তৈরি করতে পারেন, আপনার কছে যদি সেই অ্যাপ্লিকেশন থাকে তাহলে আপনি স্প্যানিশ বা আরবি না শিখেও যদি প্রযুক্তি ভাষা শেখেন তাহলে পৃথিবীর ৯০ ভাষাতে যোগাযোগ করতে পারবেন।
আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আগামী বছরেই প্রাথমিকে প্রোগ্রামিং শিক্ষার পাঠ্যবই যুক্ত করা হচ্ছে বলেও জানান পলক। পাশাপাশি আগামীতে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও আয়োজকদের প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক এনামুল কবির।
বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে একসময় বাংলাদেশের সবাই প্রোগ্রামিং জানবে নিজের এমন স্বপ্নে কথা তুলে ধরে অচিরেই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
আর এই কাজ সহজ করতে নিজের লেখা প্রোগ্রামিং শেখার শর্টকার্ট বইটির সঙ্গে সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এনএইচএসপিসি শুরুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নিজেদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং প্রযুক্তি বিষয়ক সমস্যা সমাধানে বাহিরের দেশের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের দেশের প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি দ্বারাই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে,তাহলেই আমরা প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
আগামী বছর ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে যা এখন পর্যন্ত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অনুষ্ঠিত হয়নি। এবং এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশের তরুণ তরুণীরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। তিনি করোনাকালীন সময়ে তরুণদের এগিয়ে যাওয়া, প্রোগ্রামিং ও প্রবলেম সলভিং এ ভালো করার বিষয়টিকে আশীর্বাদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে বিচার প্রক্রিয়া তুলে ধরেন তারিফ এজাজ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এনএইচএসপিসি ২০২১ এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।