পদ্মাসেতুর পর আগামী ২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের দ্বিতীয় প্রকল্প ঢাকা মেট্রো রেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের একদিন পরই সাধারণ যাত্রীরা টিকেট কেটে কাঙ্খিত মেট্রোরেলে চড়বেন। কিন্তু মেট্রোরেলের ইতিহাসের পাতা বাস্তবে উন্মোচিত হওয়ার সন্ধিক্ষণেও এই মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে কার্যকর মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হওয়ায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে উড়াল পথে মেট্রোরেলে ভ্রমণের সময় নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য স্টেশন ও রেল বগিতে ফ্রি ওয়াইফাই এর দাবি করেছে গ্রাহক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।
এ নিয়ে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্পের সাথে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা দানের জন্য এই প্রকল্পে কোন নকশা বা ব্যবস্থা করা হয়নি। কিন্তু একজন গ্রাহক এই পথ ভ্রমণের সময় স্টেশনে অপেক্ষা ও রেল ভ্রমণের সময় মিলালে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় অতিবাহিত করবেন। এই সময়ে যদি একজন নাগরিক নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা এবং টেলিযোগাযোগ থেকে দূরে থাকে তাহলে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে লক্ষ্য তা বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায়। অথচ দুঃখের সাথে বলতে হয় পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি গড়ে তোলার কোন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় না। আমাদের দাবি খুব দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে মেট্রো রেল স্টেশন সমূহ ও রেলের বগিতে যাত্রীদের সুবিধার্থে ফ্রী ওয়াইফাই ইন্টারনেটের ব্যবস্থা প্রদান করা। পাশাপাশি টেলিযোগ ও ইন্টারনেট সেবা দানের জন্য যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দ্রুত নিষ্পত্তি করা। আর এই সেবা দানের মাধ্যমে মেট্রোরেল হয়ে উঠবে একটি স্মার্ট রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানাগেছে, নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে যেন, অপারেটররা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তর হতে আগারগাঁও) এ নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে পারে।
চিঠিতে এমটব লিখেছে, স্টেশনগুলোতে প্রতিদিন বিপুল লোক সমাগম হবে যেখানে ব্যাপক সংখ্যক মোবাইল সংযোগের ব্যবহার হবে। ফলে স্টেশনের ভেতরে এই বাড়তি ডেটা ও ভয়েসের চাহিদা সামাল দিতে সবগুলো অপারেটর একসঙ্গে স্টেশন ভবনের ভেতরে কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে চায়। যা টিকেট কাউন্টার, প্লাটফর্ম, লাউঞ্জ, খাবারের স্টলসহ ট্রেন যাওয়া-আসার সময় হওয়া বেশি লোক সমাগমে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করবে।চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে অপারেটরগুলো এমআরটি লাইন-৬ এর ৯টি স্টেশনে টেকনিক্যাল জরিপ ও সম্ভব্যতা যাচাই করেছে যা তারা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিও। ওই চিঠিতে লাইন-৬ এ মেট্রোরেল ও স্টেশনগুলোতে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে মোবাইল অপারেটরগুলোর টেকনিক্যাল জরিপ এবং কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বিটিআরসি বলেছে, মেট্রোরেল এবং স্টেশনগুলোতে বিশাল পরিমাণ জনগণের একই সময় ও একত্রে সমাগত হওয়ার কারণে উল্লেখিত স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক জানিয়েছেন, মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে স্টেশন নির্মাণের সময়ে বা আরও আগে যোগাযোগ করেনি। ফলে এখন স্টেশনের ভেতরে তার-যন্ত্রপাতি এসবে স্থাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হবে বলে বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ট্রেনটা ১০০ কিলোমিটার বেগে চলবে। বিদেশে তো ৪০০ কিলোমিটার, সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার বেগেও ট্রেন চলে সেখানে কিন্তু নেটওয়ার্কের কোনো সমস্যা হয় না। সেইভাবে নেটওয়ার্কটাকে অপারেটরদের স্থাপন করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, উদ্বোধনের পর শুরুতে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে চলবে। প্রথম সপ্তাহে শুধু সকালে ও বিকালে ছয় বগির ট্রেন ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে মেট্রোরেলে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পরে পুরোপুরি চালু হলে তা হবে ১৬-১৭ মিনিট।উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন নয়টি। ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।