করোনা পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ৩৩৩ নম্বরে ৪ লক্ষের অধিক ফোন কল রিসিভ হয়েছে। এর মধ্যে এক লক্ষের অধিক চিহ্নিত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকটে বাংলাদেশে ত্রাণ প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে এমনটাই জানিয়েছেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
কোভিড-১৯ সৃষ্ট সংকটে বাংলাদেশে ত্রাণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে ৭ মে অনুষ্ঠিত হয় এই ওয়েবিনার। ওভারসীজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই), ইয়েল ইউনিভার্সিটি ম্যাকমিলান সেন্টার, ইয়ুথ পলিসি ফোরাম এবং ঢাকা ট্রিবিউন যৌথভাবে এ ওয়েবিনার আয়োজন করে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশন এর ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ফর দি পুওর বিষয়ক সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মারিয়া মে এবং ওডিআই-এর পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক ফিন্যান্স প্রোগ্রাম) মার্ক মিলার সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক মোবারক, জেমস্ পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ্ এর ডীন ও অধ্যাপক সাবিনা রশিদ এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ সরকারের কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগের নেতৃত্ব দানকারী এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দরিদ্র এবং হতদরিদ্র নাগরিকদের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় (করোনা সংকটকে কেন্দ্রে করে ৫ কোটি মানুষের জন্য আরো ১০ কোটি ডলার বৃদ্ধি করে ২০০ কোটি ডলারের বেশি করা হয়েছে) সরকারের নানা উদ্যোগ বিশেষ করে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, করোনা সংকটের কারণে চাকুরি হারিয়ে যারা নতুন করে অসহায় হয়েছেন তাদের জন্য সরকার প্রায় ৯ কোটি ডলার বিশেষ ত্রাণের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে চাকুরি হারানোর কারণে জীবিকা ব্যয় নির্বাহে অক্ষম হয়ে যারা ঢাকা শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাদেরকেও এই লক্ষ্যমাত্রায় যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা খুব সহজ নয় এবং আমরা এই মাসে ঈদের আগেই তাদের কাছে অর্থ পৌঁছাতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা ভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় লক্ষ্য নির্ধারণ, কিউআর কোডের সমন্বয় এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থানীয় প্রশাসনের তালিকার মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে নাগরিক তথ্য ও সেবার জন্য চালুকৃত আমাদের জাতীয় কলসেন্টার ৩৩৩ এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের চিহ্নিত করতে এটিকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি মূলত সমন্বিত একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্যে তথ্য সংগ্রহের জন্য নিম্ন স্তরের প্রযুক্তি (ফিচার ফোন থেকে প্রাপ্ত ফোনকল), ক্যাটাগরি করতে উঁচু স্তরের প্রযুক্তি (ফোন ব্যবহারকারিদের উপর টেলিকম ডাটা) এবং যাচাইয়ের জন্য মানুষের সংস্পর্শের সমন্বয়। তিনি দরিদ্র জনগণের সহায়তায় আসন্ন ক্রাউড-ফান্ডিং উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন এবং এতে যুক্ত হওয়ার আহবান জানান।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ তার বক্তব্যে এই যুদ্ধকালীন সময়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রক্রিয়াটিতে কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি, মালিকানা এবং ক্ষমতায়নের উপর জোর দেন।
সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নির্ধারণ করতে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে অর্থ হস্তান্তরের বিষয়ে প্যানেল সদস্যরা আলোচনা করেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক মোবারক প্রযুক্তি, গবেষণা এবং মানব উপাদানসমূহের অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণাদি ব্যবহার করে একটি মডেলের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন ও অধ্যাপক সাবিনা রশিদ পরবর্তী প্রান্তিকতা রোধে নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হিজড়া সম্প্রদায় এবং যৌনকর্মী সহ দরিদ্রদের মধ্যে সর্বাধিক দূর্বলদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন।
সেমিনারে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ন্যায্যতা যাচাই, লক্ষ্যবস্তুর কার্যকারিতার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ নোভিগেশন এবং লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তির জন্য অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উক্ত সেমিনারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ত্রাণ পৌঁছানো উভয় কার্যক্রমে মোবাইল প্রযুক্তির শক্তির বিষয়টি ফুটে উঠেছে। একটি কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্ত মডেলের জন্য আরো আলোচনা ও বিতর্কের সম্ভাবনার দিক তুলে ধরা হয়।