দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক মিশ্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে উচ্চগতির নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের পাশাপাশি ডিভাইস ও কনটেন্ট এর সহজলভ্যতাকেও সমান গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন অংশীজনেরা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতেও পরমর্শ দিয়েছেন তারা।
রাজধানীর একটি হোটেলে মঙ্গলবার বিটিআরসি, অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এবং অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট (এ৪এআই) আয়োজিত কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে চারটি দলে বিভক্ত হয়ে এমন পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীরা।
গ্রুপগুলো নিম্নোক্ত চারটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন: (১) সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্রডব্যান্ড সেবা (Broadband in public secondary and Primary Schools), (২) বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রডব্যান্ড সেবা (Broadband in Universities) (৩) কারিগরী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (Technical Training Programs) ও (৪) জনসাধারণের তথ্যপ্রযুক্তি সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি (Public ICT Awarness and Capacity building programs)।
গ্রুপ-১ এর সুপারিশমালায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্থাপনে ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগ ও গতি নিশ্চিতকরণ, নতুন কনটেন্ট তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ইকুইপমেন্ট ও ক্লাউডের ব্যবহার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মানসিকতা তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
গ্রুপ-২ এর সুপারিশমালায় পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এর লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হওয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ, ল্যান, সার্ভার নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যার প্রস্তুতের কথা উল্লেখ করা হয়।
গ্রুপ-৩ এর সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয় যে, তথ্যপ্রযুক্তির কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য চাহিদাভিত্তিক দক্ষ মানব শক্তি, ডাটাবেজ উন্নয়ন, প্রযুক্তি পরিবর্তনের সাথে সাথে কারিকুলাম হালানাগাদকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জ্য রেখে প্রশিক্ষণ কারিকুলাম প্রস্তুত করা ও প্রশিক্ষণ অ্যাপস চালুর ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এছাড়া, কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য এ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পিপিপির আওতায় বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
গ্রুপ ৪ এর সুপারিশমালায় জনসচেতনা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বিটিআরসি, এটুআই এর জনসচেতনতামুলক কার্যক্রমের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমেও জনসচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, কর্মশালায় উপস্থাপিত পরামর্শ ও সুপারিশগুলো ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন, আর্থিক সংস্থান, ব্যবস্থাপনা, রক্ষাবেক্ষণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
A4AI এর জাতীয় সমন্বয়ক শহীদ উদ্দিন আকবর এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসাইন, A4AI এর হেড অব এশিয়া প্যাশিফিক অঞ্জু মঙ্গলসহ এটুআই, শিক্ষা মন্ত্রণলায়, টেলিকম সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।