দুর্বিপাকেও সচল রাখার পাশাপাশি শিক্ষাকে উপভোগ্য করার নিরিখে আগামী (২০২৩) বছরের মধ্যে প্রযুক্তির বন্ধনে গ্রন্থিত হতে যাচ্ছে অর্ধ-লক্ষাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ের মধ্যে দেশে সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সদরের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিশ্চিত করা হবে মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগ। তবে বাদ যাবে না যেসব স্থানে এখনো পপ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি সেসব এলাকাও। এজন্য ব্রডব্যান্ডের পাশাপাশি স্যাটেলাইটেও যুক্ত করা হচ্ছে দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে। মোট ৯৮ হাজার ৩৪৯টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬১টি ক্লাসরুম ও ১২ হাজার ১০৫টি ল্যাবকে ন্যূনতম ৩০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগে যুক্ত করা হবে।
এজন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র মাধ্যমে ডিজিটাল মহাসড়ক তৈরিতে চলছে সমন্বিত কার্যক্রম। কানেক্ট বাংলাদেশ কার্যক্রমের অধীনে দেশজুড়ে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক মিশ্রিত শিক্ষার (Blended Education) নতুন দুয়ার।
এই নতুন দিগন্তের আয়োজন বিষয়ে বিটিআরসির সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: নাসিম পারভেজ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের এক লাখের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫ ভাগ এবং ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৭৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সিটিতে। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮.৭৫ শতাংশ স্কুল রয়েছে উপজেলা সদরে। ইউনিয়ন সদরে আছে ৪.৬৮ শতাংশ। কিন্তু ইউনিয়ন সদরের বাইরে রয়েছে ৭৫ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোকে ডিজিটাল মহাসড়কে সংযুক্ত করা হবে ফাইবার অপটিকে।
তবে এজন্য প্রায় ১৪ লাখ ইন্টারনেট সংযোগের পাশাপাশি ৯৮,৬৩৬টি ডিজিটাল ডিভাইস তথা ল্যাপটপ এবং প্রতিটি ক্লাসরুমের জন্য ২০ থেকে ৩০ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
পাশাপাশি গৃহীত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ন্যাশনাল ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম বা এনএমএস চালু, সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সার্বক্ষণিক সচল রাখতে কারিগরি জনবল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, সেবার মান নিশ্চিতকরণ, নির্ধারিত গতিতে ব্যান্ডউইডথ সরবারহ, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন নাসিম পারভেজ।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ১৮ কোটি ৪০ লাখ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাড়ে ১২ কোটি। প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৫ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ৪,৪৩১টি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি দেওয়া হয়েছে এবং দুর্গম অঞ্চলে আরো ১২৩টি ইউনিয়নকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কানেক্ট করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসওএফ তহবিল থেকে এই কাজ করবে বিটিআরসি। আশা করছি আমরা প্রত্যেকটি ইউনিয়নকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সংযুক্ত করবো। সেখান থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ দেবে আইএসপি। এনটিটিএন এবং আইএসপি এক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করবে।
বিটিআরসি, অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এবং অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট (A4AI) এর কর্তৃক আয়োজিত কর্মশালায় দেয়া বিশদ উপস্থাপনায় করেন বিটিআরসির সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক।
উপস্থাপনায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সঙ্গায়নের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, এখন ২০ এমবিপিএস হলেও ২০২৫ সাল নাগাদ ৫০ এমবিপিএস গতিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বলা হবে। আর ২০৩১ সালে ব্রডব্যান্ড হতে হলে গতি হতে হবে ২জিবিপিএস। উন্নত দেশ হতে হলে ছুঁতে হবে ১০ জিবিপিএস গতি।