গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া তাদের প্রথম নজরদারি স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠায়। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, এই স্যাটেলাইটের মূল কাজ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কার্যক্রমের ওপর নজর রাখা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরপরই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায় পশ্চিমা দেশগুলো।
তারা বলছে, নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে পিয়ংইয়ং। বিষয়ে নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কও হয়েছে। যেখানে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেছে উত্তর কোরিয়া।
এরই মধ্যে বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউস ও প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব অফিসের ছবি পাঠিয়েছে স্যাটেলাইটটি। সেসব ছবি নিয়ে ‘গবেষণা’ করছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ এমনটাই জানিয়েছে। খবর রয়টার্স ও সময় নিউজ।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত কিম সং বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের বেলায় নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাহলে তাদের বেলায় কেন থাকবে।
কিম সং আরও বলেছেন, বিশ্বের আর কোনো দেশই উত্তর কোরিয়ার চেয়ে বেশি নিরাপত্তা হুমকিতে নেই। যুদ্ধবাজ দেশ যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পরমাণু অস্ত্র দিয়ে হামলার হুমকি দিচ্ছে। তাদের যে যে অস্ত্র আছে, সেই সেই অস্ত্র তৈরি, পরীক্ষা ও উৎপাদন করা আমাদের বৈধ অধিকার।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত দেশ উত্তর কোরিয়া এতদিন পর্যন্ত বিদেশি স্যাটেলাইটের নজরদারিতে ছিল। এখন তারা নিজেরাই কক্ষপথে একটি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে অন্যান্য দেশকে নজরদারিতে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা কিম জং উনের জন্য একটি বড় অর্জন।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আরটি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম কেসিএনএর বরাত দিয়ে জানায়, স্যাটেলাইটটি এরই মধ্যে বেশ কিছু ছবি বিশেষ করে হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন ও মার্কিন রণতরীর ছবি পাঠিয়েছে। উত্তর কোরীয় নেতা কিম এখন সেসব ছবি নিরীক্ষা করেছেন।
কেসিএনএ জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, গুয়াম ও ইতালির বেশ কয়েকটি শহর ও সামরিক ঘাঁটির ছবি তুলেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের ছবিও তুলেছে এই স্যাটেলাইট। তবে এখন পর্যন্ত পিয়ংইয়ং তাদের স্যাটেলাইটের ধারণ করা কোনো ছবি প্রকাশ করেনি।
গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের তোলা ছবিগুলোকে কেসিএনএ ‘গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু’র ছবি হিসেবে বর্ণনা করেছে। কেসিএনএ জানায়, কিম জং উন গুয়ামে অবস্থিত অ্যান্ডারসেন বিমানঘাঁটি, নরফোকের একটি নৌঘাঁটি ও নিউপোর্টের একটি বিমানঘাঁটির ছবিও নিরীক্ষা করছেন। এই ছবিগুলোতে চারটি পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন রণতরী ও যুক্তরাজ্যের একটি যুদ্ধবিমানবহনকারী রণতরী চিহ্নিত করেছে পিয়ংইয়ং।
উত্তর কোরিয়ার দাবি, এই ছবিগুলো গতকাল সোমবার তোলা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোনো বাণিজ্যিক উৎস থেকে উল্লেখিত অবস্থানগুলোর একই দিনে তোলা কোনো ছবি সংগ্রহ করতে পারেনি রয়টার্স।
ডিবিটেক/বিএমটি