দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা দুই শতাধিক ডায়াবেটিস হাসপাতালের প্রতিটি কেন্দ্র ও হাসাপাতালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সংযুক্ত করে স্মার্ট টেলিমেডিসিন সুবিধা চালুর আশ্বাস দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সোমবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষ্যে ডায়াবেটিস ফেডারেশন আয়োজিত বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নাটারের সিংড়া থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়ে এই ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস সমিতির প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা অল্পদিনের মধ্যেই ব্রডব্যান্ড সংযোগ, টেলিমেডিসিন ও স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রদান করবো। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সুস্থ-সবল, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা, প্রত্যেক নাগরিকের ডায়াবেটিস পরীক্ষা এবং খাদ্যাভ্যাস-জীবনাচার পরিবর্তনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতে হবে।
সূত্রমতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মোট ১৫,৪৪৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’ অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইনসুলিন আবিস্কারক বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনকিন ও চার্লস বেস্ট এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেন। কমিউনিটি পর্যায়ে গ্রামীণ হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ইন্টারনেটের সেবা দিয়ে প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করছেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি’র সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ. কে. আজাদ খানের সভাপতিত্বে মূল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস ম্যালার (Mr. Christian Brix Maller),নভো নরডিস্ক (Novo Nordisk) এর ভিপি ও জিএম রাজর্ষি দে সরকার বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও অন্যান্যেন ম্যে বারডেম মহাপরিচালক অধ্যাপক এম. কে. আই. কাইয়ুম চৌধুরী,বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি’র মহাসচিব মোঃ সাইফ উদ্দিন,বাডাস পেডিয়াট্রিক ডায়াবেটিস কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ডাঃ বেদোয়ারা জাবীন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অল্পবয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হওয়া বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণীদের পুরস্কৃত করা হয়।
ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস বহুলাংশ প্রতিরোধযোগ্য। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। মুটিয়ে যাওয়া, মেদ বাড়া, ফাস্ট ফুড খাওয়া এবং কায়িক শ্রম কমে যাওয়ায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। যাদের এসব ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বয়স বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ৩০ বছর পার হতেই সতর্ক থাকতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ডায়াবেটিস টেস্ট সার্ভে থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি দশ জনে এক জনের ডায়াবেটিস রয়েছে। ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির পক্ষ থেকে এক লাখ লোকের ওপর করা একটি স্টাডি থেকে জানা যায়, দেশে পাঁচ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের চার দশমিক চার শতাংশ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ২৫ দশমিক সাত শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চার জনে একজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেখা যাচ্ছে ১৯ থেকে ২১ সালের মধ্যে প্রতি দুই বছরে ৫৬ শতাংশ হারে ডায়াবেটিস বাড়ছে এবং সমসংখ্যক লোকের প্রি-ডায়াবেটিস রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ১৫ থেকে ২০ বছরে এই সংখ্যা ডাবল হয়ে যাবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করবে।