ব্র্যান্ড পণ্য বিশেষ করে স্মার্টফোন, ফ্রিজ, এসি নিয়ে ফের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফিরছে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। আগামী ১৫ তারিখ অক্টোবর থেকে সার্ভার চালু ও পণ্য বেচাকেনা শুরু করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং ক্যাশ বিফোর ডেলিভারির সঙ্গে পিক এন্ড পে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর সক্রিয় হওয়া ইভ্যালির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এখন দেয়া হচ্ছে ফিরে আসার নতুন নতুন অফারের বার্তা। এরইমধ্যে স্যামসাং ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওভেন এর পাশাপাশি ওয়ানপ্লাস ও মটোরোলা স্মার্টফোন নিয়ে শিগগিরই ফেরার আগাম বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে এই পেজে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে পেজটি থেকে ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ’ শিরোনামে পোস্ট দিয়ে শুরু হয় নতুন করে ফিরে আসার অভিযান। যেখানে ক্যাশ অন ডেলিভারি ও পিকে অ্যান্ড পে-র কথা উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দেওয়া হয়- ‘শিগগির আসছে’। ওইদিনই বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে একটি বিজ্ঞাপন দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ‘ওয়ানপ্লাস ১০টি ৫জি’ মোবাইল, শিগগিরই আসছে ছবিতে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এ ছাড়া এ ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘সম্পূর্ণ ক্যাশ অন ডেলিভারি, পিক অ্যান্ড পে এবং ক্যাশ বিফোর ডেলিভারিতে উপভোগ করুন আকর্ষণীয় সকল পণ্য!’।
এর পরদিন, ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন করে যুক্ত করা পিক অ্যান্ড পে সেবার মডেল বিষয়ে জানানো হয়েছে, এই মডেলে ওয়েবে ইভ্যালির ই-শপ থেকে অর্ডারকৃত পণ্য সেলারের ব্র্যান্ড শপ অথবা দোকানের ঠিকানা থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্ডার কনফার্ম হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে গ্রাহককে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করতে হবে। তবে শপে সরাসরি পণ্য দেখে পণ্যের গুণগত মান পছন্দ না হলে, গ্রাহক সেই অর্ডার বাতিল করতে পারবেন। পণ্য হাতে পাওয়ার পর গ্রাহকের অর্ডার প্যানেল থেকে ‘রিসিভ’ বাটন প্রেস করতে হবে। পণ্য সংগ্রহের পর মূল্য পরিশোধ করে অর্ডার প্যানেল থেকে ডেলিভারড মার্ক করতে হবে।অর্ডার প্যানেল থেকে রিসিভ বাটন প্রেস করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অটোমেটেড ডেলিভারড দেখাবে। সেলার অর্ডার কনফার্ম করার পর গ্রাহক অর্ডার বাতিল করতে পারবে না।
এদিকে আগামী ২ অক্টোবর, রোববার থেকে অফিস করবে ইভ্যালি’র নতুন পরিচালনা পর্ষদ। নতুন এই পর্ষদের ইনডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন শিপন কে নির্ধারণ করায় ২৬ তারিখের আরেক পোস্টে ই-ক্যাব সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে ইভ্যালি।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করার বিষয়ে নতুন বোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের স্বামীকে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে শামীমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তার মা ফরিদা তালুকদার ও ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ। এছাড়া ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একজন করে প্রতিনিধি স্বাধীন পরিচালক হিসেবে ইভ্যালির পর্ষদে যোগ দিয়েছেন।
অন্যদিকে ২২ সেপ্টেম্বরের বোর্ডসভায় শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের স্বামী ইভ্যালি পরিচালনার বোর্ড সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তের আগেই গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালি থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড।
এর পর ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, পূর্বের ইভ্যালি আর বর্তমান ইভ্যালি এক নয়, আমরা সে ব্যবস্থা করে এসেছি। ইভ্যালি এখন আদালতের পর্যবেক্ষণে চলবে। তাই ইভ্যালি যদি সততা, স্বচ্ছতার সাথে ব্যবসা করে এবং ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করে, তাহলে আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে সেলার এবং ভোক্তাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। তাদের সাহায্য, সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা গ্রাহক এবং মার্চেন্টের কথা চিন্তা করে ইভ্যালিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। শুরুর পর থেকেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে দেওয়া হয় একের পর এক আকর্ষণীয় অফার। ইভ্যালির এমন অবিশ্বাস্য অফার নিয়ে শুরুতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনা থাকলেও গ্রাহকরা সেই অবিশ্বাস্য অফারে ঝুঁকে পড়ে। তড়িৎ গতিতে বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়। বাইক, ফ্রিজ, ফার্নিচারসহ যাবতীয় সব পণ্যে মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি চলে ইভ্যালিতে। গ্রাহকরাও এমন মূল্য ছাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। শুরুতে রমরমা ব্যবসা করে ইভ্যালি। আগে টাকা পরে পণ্য ডেলিভারি দিলেও শুরুতে গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন পণ্য ডেলিভারির সময় দীর্ঘ হতে থাকে এরপরই গ্রাহকদের কাছ থেকে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। অভিযোগের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল কারাগারে আছেন। গত ২১ এপ্রিল তাকে জামিন দেন আদালত। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল। শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।