অক্টবরের প্রথম দিন থেকে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস শুরু করলো সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেসস ফাউন্ডেশন। সচেতনতা সৃষ্টিত কন্টেন্ট নিয়ে শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ড. ইজাজুল হকের সভাপতিত্বে সিসিএ ফাউন্ডেশন সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান মূল বক্তব্যে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সাবাইবার অপরাধ প্রবণতায় বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশে সাইবর হামলায় ভুক্তভোগীদের ৮০ শতাংশের বয়স ১৮-৩০ বছর। এক বছরের ব্যবধানে ভুক্তভোগী বেড়েছে ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
তিনি বলেন, ৪টি বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে এই ঝুঁকি থাকবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা ডিজিটাল স্বাক্ষরতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারে মাল্টি ফ্যাক্টর অথেনটিকেসি নিশ্চিত করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, সফটওয়্যার প্যাচ আপডেট করে নিরাপত্তা এবং ফিশিং চিনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করতে কাজ করবো। এক্ষেত্রে তরুণদের সংশ্লিষ্ট ককে সচেতনতা গড়ে তুলতে ক্যাম চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এসএমএসস ক্যাম্পেইন, ৬৪ জেলায় শাতাধিক তরুণকে নিয়ে ঢাকায় যুবকর্মশালা, প্রতি সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওয়েবিনার, ডিজিটাল পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন চলবে।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ক্যাম জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কাজী মুস্তাফিজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে রবি আজিয়েটার সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী, আইএসপিএবি যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল কাইয়্যুম রাশেদ, জাতীয় কমিটি ও ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সদস্য কাউছার উদ্দিন, আবুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাসের কর্মসূচি শেষ হলেও সচেতনতা কার্যক্রম বছর জুড়েই চলবে।
সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ক্রমেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি। আগে রবির গ্রাহকদের ৪০ শতাংশ ফোর জি ব্যবহার করতো, যা এখন ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই।
মো. আবদুল কাইউম রাশেদ বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে অক্টোবর মাসব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে আইএসপিএবি। সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকদের সচেতনতায় গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
কাজী মুস্তাফিজ বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় যেভাবে অক্টোবর মাসব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়, সেদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তৃণমূল পরযায়ে প্রত্যেক প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
এবারের ক্যাম কর্মসূচির থিম বা প্রতিপাদ্য: ২০২২ সালে বাংলাভাষীদের জন্য ‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটি। এই বছরের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চান যে, আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের উপায় আছে। মাত্র চারটি মূল পদক্ষেপ অনুসরণ করলে সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হবে না। কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আপনার তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন। অক্টোবরের প্রতি সপ্তাহে আলাদা একটি করে চারটি বিষয়ে কর্মসূচি হবে। প্রথম সপ্তাহ: মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন, দ্বিতীয় সপ্তাহ: শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, তৃতীয় সপ্তাহ: আপনার সফ্টওয়্যার আপডেট করুন এবং চতুর্থ সপ্তাহ: ফিশিং চিনুন এবং রিপোর্ট করুন।
ক্যাম জাতীয় কমিটির কর্মসূচি: মাসব্যাপী ক্যাম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতার বার্তা সারাদেশে পৌঁছে দিতে যেকোনো ব্যক্তি/সংগঠনকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্যাম জাতীয় কমিটি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে www.cyberawarebd.com এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাংলা টুলকিটসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ পাবেন এবং এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান করতে পারবেন।
তৃণমূল ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মাসব্যাপী সারাদেশে এসএমএস ক্যাম্পেইন, ৬৪ জেলা থেকে শতাধিক তরুণ-তরুণীকে ঢাকায় যুব কর্মশালার আয়োজন, সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা, প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার, ডিজিটাল পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতা, স্যোশাল মিডিয়ায় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন।
অক্টোবরের ক্যাম কর্মসূচি: আমেরিকার ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) পৃথিবীজুড়ে সাইবার সচেতনতা মাসের এই ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর বিশ্বের ৭৫টির বেশি দেশের অগণিত বাণিজ্যিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের অসংখ্য ‘সাইবার চ্যাম্পিয়ন’ সাইবার সচেতনতা মাসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
বাংলাদেশে ২০১৬ সালে সিসিএ ফাউন্ডেশন এই কর্মসূচির সূচনা করে। ২০২১ সালে ক্যাম জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলের সামাজিক সংগঠকদের যুক্ত করা শুরু হয় এবং গত বছর এই ক্যাম্পেইনে সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান (৪৯টি) চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা পোস্ট করা, বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স তৈরি, প্রবন্ধ রচনা ও প্রকাশ, অনলাইন ইভেন্ট পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের চ্যাম্পিয়নবৃন্দ দেশের নাগরিকদের সাইবারজগতে নিরাপদ হতে সহযোগিতা করেছে। এ বছরও এই কর্মসূচিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।