ইন্টারনেট সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’ বাস্তবায়নের পর সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবায় জাতিসংঘের লক্ষ্য পূরণে সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ব্যায়ে প্রতিবেশী দেশ ভরত এবং শোসক দেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও বৈশ্বিক ইন্টারনেট ফোরাম অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেটের (এফোরএআই) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় অনুপাতে ইন্টারনেট সেবায় ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
বিশ্বের বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশে ইন্টারনেটের দাম যেখানে জাতিসংঘ নির্ধারিত দুই শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল; সেখানে ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রতি দুই জিবি মোবাইল ডেটাভিত্তিক ইন্টারনেটের জন্য মাসিক মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে জাতীয় আয়ের ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ইন্টারনেট মূল্য ছিলো দুই দশমিক ৩২ ডলার। ক্রয়সক্ষমতার সমতার হিসাবে এ ব্যয় ৫ দশমিক ৯৮ ডলার।
তবে মোবাইল ইন্টারনেটের সাশ্রয়ী দামে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিলো ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ব্রডব্যান্ডের মূল্য বাড়লেও ব্রডব্যান্ডে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ জিবি তারযুক্ত, অর্থাৎ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মাসিক মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ ব্যয় হয়। এই ইন্টারনেটের মূল্য ছিলো ৩ দশমিক ৩৯ ডলার। ক্রয়সক্ষমতার সমতার হিসাবে এ ব্যয় ৮ দশমিক ৭৩ ডলার। অবশ্য ব্রডব্যান্ডে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় ব্যয় কম।
যদিও আইটিইউ এবং এ৪এআই- এর ‘আইসিটি সেবার সক্ষমতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের দাম ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) ৩.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালে এই হার ছিলো ২.৯ শতাংশ। মোবাইল ব্রডব্যান্ডের দামও ২০২১ সালে জিএনআই-এর ২ শতাংশের সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ১.৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে গত বছর জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে বিশ্বের ৯৬টি দেশ। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে ৬৪টি দেশ।
অপরদিকে ইন্টারনেটের দাম পর্যালোচনাকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান কেব্ল ডটকো ডটইউকের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৩০টি দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের কম দামের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। ওইসময়ে বাংলাদেশে ১ গিগাবাইট ইন্টারনেটের গড় দাম ছিল শূন্য দশমিক ৩৪ ডলার।
প্রসঙ্গত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ভিত্তিতে একটি দেশের জাতীয় মাথাপিছু আয়ের দুই শতাংশের কম খরচ হতে হয় ইন্টারনেট বাবদ। জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশনের বেধে দেয়া এই সীমানার মধ্যেই রয়েছে দেশের ডেটা ও ব্যান্ডউইথ ভিত্তিক ইন্টারটেনেটের দাম। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশসহ ভুটান, মিয়ানমার ও নেপাল জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
এর মধ্যে ২০২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারতি দামের সর্বোচ্চ সীমা থেকে মোবাইল ডেটাভিত্তিক ইন্টারনেটে দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ব্রান্ডউইথে দশমিক ২ শতাংশ কম মূল্যে সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা।
অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ভিত্তিতে বাংলাদেশে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার অন্তরালে বিশেষ অবদান রাখছে দেশের ইন্টারনেট সেবা খাতও।
এ কারণেই এই প্রতিবেদনে উদ্ধৃদ করা হয়েছে আইটিইউর মহাসচিব হাওলিন ঝাও এর একটি মন্তব্য যেখানে তিনি বলেছেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা এখন বিলাসিতা নয়। যোগাযোগ, টেলিওয়ার্কিং, অনলাইন শিক্ষা ও অন্যান্য কাজে এখন এ সেবা জরুরি হয়ে উঠেছে। সর্বজনীন ও অর্থপূর্ণ সংযোগের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে ইন্টারনেটকে অবশ্যই ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে নিতে কাজ করতে হবে।
যেই কাজটি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। আইটিইউ-এফোরএআই এবং কেব্ল ডটকো ডটইউকের প্রতিবেদন তৈরির পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চলতি মাস থেকে ব্রডব্যান্ডের পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ‘ডেটা প্যাকেজে’-কে সুলভ করতে নতুন নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতে আগামী প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।