প্রতিষ্ঠাকালীন বাঁধা পেরিয়ে গত সাত বছরে সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাবের অর্জন অভাবনীয়। বিশেষ করে করোনাকালে সহযোগী সব সংগঠন থেকে সদস্যবান্ধব হিসেবে এগিয়ে ছিলো ই-ক্যাব। সব মিলিয়ে সঠিক পথেই চলছে। নিষ্ঠার সঙ্গে আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ই-ক্যাবের বর্তমান কার্য নির্বাহীর সদস্যরা।
ই-ক্যাব সদস্য থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা ও অংশীজনদের কণ্ঠে এমন তৃপ্তির কথা শোনা গেলো সোমবার রাতে। গুলশানের একটি রেঁস্তোরায় অনুষ্ঠিত ‘ই-কমার্স গেট টু গ্যাদার’-অনুষ্ঠানে সামনে আরো ভালো করতে চতুর্থ ই-ক্যাব নির্বাচন উপলক্ষ্যে অগ্রগামী প্যানেল সদস্যদের বক্তারা দিলেন পরামর্শও।
সবার পরামর্শ এবং ইচ্ছের প্রতিফলন নিয়ে দুই বছরের মধ্যে সম্ভব বাস্তব ভিত্তিক একটি ইশতেহার পেশ করার জানালেন প্যানেল প্রধান শমী কায়সার। শুরুতেই তিনি বললেন, ‘যারা অ্যাসোসিয়েশনে সময় দিয়েছে এবং নার্ভ বুঝে তেমন সদস্যদের নিয়েই অগ্রগামী টিম করেছি। তবে আজ আমরা বলবো কম; শুনবো বেশি’।
বাস্তবেও ঘটলো তাই। প্রায় ৫০ জনের মতো বক্তব্য রাখলেন আড়াই ঘণ্টার আড্ডায়। প্যানেলের লড়াকু সদস্য ফুডপ্যান্ডা সহ-প্রতিষ্ঠাতা আম্বারিন রেজার উপস্থাপনায় অগ্রগামী- মিশন ২০২৬ এর খসড়া তুলে ধরেন সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা পেপার ফ্লাই সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হাসান। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, লজিস্টিকসহ ই-কমার্স ইকো সিস্টেমে ই-ক্যাব সদস্যদের ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
তবে এর আগে শুরুতেই বেসিস’র প্রাক্তন সভাপতি ও এফবিসিসি আর পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, এই প্যানেলের সবাই নিজেদের লোক। এতোদিন ধরে আপনাদের সঙ্গেই ছিলাম। এখনো আছি। কোভিডে ই-ক্যাব সবচেয়ে ভালো করেছে। এই প্যানেলে যাদের দেখছি তাদের মেজরিটিই অভিজ্ঞ। নতুনদের ব্যাকগ্রাউন্ড তারা সাকসেস ফুল। সবাই মিলে আমরা আইসিটি পরিবার। সবাইকে নিয়ে একসাথে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
মাল্টিস্টেক হোল্ডার হিসেবে ‘পার্টিকুলারলি কোনো সদস্যদের দায় ই-ক্যাবের নয়’ উল্লেখ করে সোশ্যাল এন্টরপ্রেনিউর ডিনেট সিইও ড.অনন্য রায়হান বলেন, সংগঠনে সুযোগ সন্ধানীরা থাকবে। তবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সদিচ্ছা তাদের ছিলো। কোভিডে ই-ক্যাব দারুণ ভূমিকা রেখেছে। তবে সামনে এর পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি কিন্তু বড় ইস্যু হিসেবে দেখা দেবে। বিষয়টি আগে ভাগেই গুরুত্ব দিতে হবে। আর সংগঠন কুক্ষিগত কররা যে কথা উঠেছে তা হলে আজ নির্বাচনই হতো। এটা পজিটিভ দিক।
অনুষ্ঠানে অগ্রমামী প্যানেলের জন্য শুভ কামনা জানান ই-ক্যাব সদস্য ডাচ উদ্যোক্তা বৌদেউজিন স্টার্ক (Boudewijin Sterk)।
ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নারী উদ্যোক্তা, মিনহা কো-ফাউন্ডার জেরিন ফারজান খান পরামর্শ দিলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দুষ্টু সদস্যদের নজরদারিতে রাখতে হবে আর ভালোদের পুরস্কৃত করতে হবে।
অ্যালোহা ই-শপ স্বত্বাধিকারি আবু নাসের বললেন, আমরা আশা করবো প্রতারক ই-কমার্স কে কীভাবে বেঁধে রাখা যায় সেদিকে বেশি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ই-ক্যাব সচিবালয়কে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নে সামনের নেতৃত্ব অধিক নজর দিবে বলে প্রত্যাশা করি।
সিসটেক ডিজিটাল রাশেদুল হাসান সোহেল বলেন, ই-ক্যাব যে প্রতিবন্ধকতা পার করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আমি খুব ভালো ভাবে জানি। তমালরা যেভাবে এটা প্রতিষ্ঠা করছে তা অভাবনীয়। ৩ বছর ধরে ওরা যে ধৈর্য ধরে অ্যাফোর্ড দিয়েছে তার জন্য প্রশংসা করতেই হবে। আজকে ই-ক্যাবের এই ভাইব্র্যান্ট অবস্থানের সর্বোচ্চ ক্রেডেট এই প্যানেলকে দিতে হবে। কেননা শুরু যারা করে তারা নিজে নিজে শিখে। তাদের অভিজ্ঞতার ভ্যালু আছে। ওদেরিই ছক্কা মারার কথা।
অগ্রগামী প্যানেল একটি স্ট্রং টিম উল্লেখ করে প্রকৃত অর্থেই ডিজিটা নলেজ ইকোনোমি-তে ই-ক্যাবকে নেতৃত্বে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেটার স্টোরিজ লিমিটেডের চিফ স্টোরিটেলার মিনহাজ আনোয়ার। বক্তব্যে তিনি এই প্যানেলকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল সংস্কৃতি চালুর মাধ্যমে ই-ক্যাব থেকেই সিরিজ বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেন। এ জন্য দক্ষ জনশক্তি থৈরি ও কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামীকে সুনির্দিষ্ট ইশতেহার ঘোষণার আহ্বান জানান।
ই-ক্যাব উপদেষ্টা ইকবাল জামাল জুয়েল বলেন, শমী-তমালের নেতৃত্বে ই-ক্যাব যে ক্রাইসিস মোকাবেলা করেছে তা সত্যি অনন্য। তারা অনলাইনে গরু বিক্রি থেকে শুরু করে তাঁতিদের পর্যন্ত এখনে নিয়ে এসেছে। তারা পথ দেখিয়েছে। তারা যে সময় দিয়েছে তা বিস্ময়ের। তারপরও নির্বাচনের আগে যখন আমরা এই নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে চাইছিলাম তখন আমাদের সমঝোতার প্রস্তাব শমী-তমাল ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা নির্বাচন চেয়েছে। আর তাদের কার্যাবলীতে আমি ১০০-তে ৯০ দিবো। চাইবো তারা আরেকবার আসুক। কেননা তারা এখন অভিজ্ঞ।
বেসিস পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু বলেন, দুষ্ট সদস্যদের জন্য ই-ক্যাবকে যারা সমালোচনা করেন তাদের বুঝতে হবে বার্থ পেইন-এ কিছু ভুলত্রুটি হয়। আশা করি তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা ভালো কিছু করবে।
ই-কমার্স উদ্যোক্তা হাংরি নাকি এমডি ও দারাজে সিওও তাসফিন আহমেদ বলেন, গত দুই বছরের মতো আগামী দুই বছরও চ্যালেঞ্জের। তবে তমাল ভাইরা প্রুভেন। তাই এই প্রাণেলের প্রতি আমার বেস্ট উইশ থাকলো।
উদ্যোক্তা কারিগর হিসেবে পরিচিত ইকবাল বাহার বলেন, এই প্যানেলের সবাই আমার পছন্দের মানুষ। তাদের উপস্থাপনায় আজ স্টার্টআপ একাডেমির যে রূপকল্প দেখলাম আমাকে আশাবাদী করেছে। নির্বাচনের পরও সদস্যদের এমন এঙ্গেজমেন্ট প্রত্যাশা করেন তিনি।
ই-ক্যাবের অপর সদস্য ও বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, এবারে আমরা অভিজ্ঞদেরই বেছে নেবো। কেননা, করোনায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে ই-ক্যাব। আমরা সবাই তাদের কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। আমরা কৃতজ্ঞ।
বক্তব্যে অগ্রগামী প্যানেল ই-কমার্স খাতটির প্রবৃদ্ধিতে গবেষণা ও উন্নয়ন সেল তৈরি করবে বলে প্রত্যাশা করেন স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রেজওয়ানা খান।
অনুষ্ঠানে ই-ক্যাব তাদের ইশতেহারে সাংবাদিক বান্ধব স্ট্র্যাটেজি আরো ভালোভাবে তুলে ধরবে বলে প্রত্যাশা করেন টিএমজিবি সভাপতি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন। আর ‘ই-ভ্যালি স্ক্যামে ই-ক্যাবের চেয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বেশি দায়ি’ উল্লেখ করে বিআইজিএফ সাধারণ সম্পাদক হাসান জাকির বলেন, ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তমাল ভাই-অনু ভাই সাংবাদিক হিসেবে ই-ক্যাব আমাদেরই পরিবার।
সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, নির্বাচন এলেই রিউমার ছড়ানো হয়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থকার প্রত্যাশা করে এই প্যানেলের পক্ষ থেকে একটা স্ট্রং সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিম রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি চাইছি এফ কমার্স কে সুরক্ষায় এই কমিটি যেনো ইশতেহারে সাইবার সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়।
ক্র্যাচে ভর দিয়ে স্টেজে এসে ই-ক্যাব সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, অ্যাসোসিয়েশন ব্যবসার ইকো সিস্টেম তৈরি করেছে এই প্যানেলের সকলেরই সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী। শমী-তমাল ভাই আজ ই-ক্যাবকে কোথায় নিয়ে গেছে তা আপনারা আজ দেখছেন। ই-ভ্যালির মতো বিষয় শমী আপার নেতৃত্বে যেভাবে এই কমিটি সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে অন্য কেউ থাকলে পারতেন না। আমি চ্যালেঞ্জ দিবো। মুখে বলা সহজ হলেও করে দেখানো সহজ না। প্যান্ডামিকের সময় ই-ক্যাব ছিলো নাম্বার ওয়ান।
এভাবেই একে একে প্রায় সকলেই অগ্রগামীর মাধ্যমে শত কণ্ঠে আমরাই ই-ক্যাব বলে বিজয় বার্তা ঘোষণা করেন। এর আগে অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে প্যানেল সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। এসময় শমী কায়শার, নাসিমা আক্তার নিশা এবং আম্বারিন রেজাকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়ে তাদেরবে অগ্রগামীর ত্রি-রত্ন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। আর মোহাম্মাদ সাহাব উদ্দিন, আসিফ আহনাফ, মোহাম্মাদ সাইদুর রহমান, শাহরিয়ার হাসান এবং মোঃ রুহুল কুদ্দুস ছোটন প্রত্যেকেই যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে পরীক্ষিত তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সে বিষয়টি তুলে ধরেন অগ্রগামী প্যানেলের কি-মেকার আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।