সদস্যদের চাঁদার টাকায় নয়; প্রার্থীদের টাকায় ভোট অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যব)। আর এ কারণেই ভোটে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী মনোয়ন চাঁদা তিন গুণ বৃদ্ধি করেছে সংগঠনটি। ২০২০-২২ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছু প্রার্থীদের চাঁদা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এই চাঁদা পরিশোধ করে ইতিমধ্যেই ৯ পদের বিপরীতে হয়েছেন ১১ জন প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে এই প্রার্থী মনোনয়ন চাঁদার পরিমাণ-কে অতিরিক্ত আখ্যা দিয়ে উদ্যোগটির বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। অবশ্য টেলিকম ও প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই প্রার্থী মনোনয়ন ফি-কে সংগঠনগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত অপারপর বাণিজ্য সংগঠনকে একটা শক্ত ধাক্কা দেবে।
এদিকে ছোট সংগঠন হিসেবে ভর্তুকী কমিয়ে সংগঠনের ভিত মজবুত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ই-ক্যাব কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। নির্বাচনের কারণে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, সদস্যদের চাঁদা সংগঠনের উন্নয়নের জন্য এর বেশির ভাগ অর্থই যদি নির্বাচনে ব্যয় করা হয় বিষয়টি মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা মনে করি, যারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সংগঠনকে সময় দিতে পারবেন মূলতঃ তারাই বাণিজ্যিক সংগঠন পরিচালনা করার যোগ্য।
শুরু থেকেই সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকা একজন সদস্য জানান, নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা প্রণয়ন থেকে ফল গণনা পর্যন্ত সময়ে মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। এর আগে ঋণের টাকায় নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন করতে হয়েছিলো। এবার যেন এমন বিব্রত অবস্থায় পড়তে না হয় সেজন্য নির্বাচনের সম্ভাব্য খরচ বিবেচনায় নিয়েই ইসি বৈঠকে এই ফি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রার্থী পরিচিতি সভা, ভোট অনুষ্ঠানের ভেন্যু ভাড়া, নির্বাচন পরিচালনা কাজে নিয়োজিতদের ভাতা, নির্বাচন পরবর্তী পদ বণ্টন ও দায়িত্ব হস্তান্তরের খরচের টাকা যেন সদস্যদের প্রদত্ত চাঁদা থেকে নিতে না হয় সে জন্য আমরা এবার প্রার্থী মনোনয়ন চাঁদা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই টাকা থেকে কোনো টাকা বাঁচলে তা সরাসরি সংগঠনের তহবিলে জমা দেয়া হবে। এতে সংগঠনের ভিত মজবুত হবে।
অপরদিকে চাঁদা বেশি না হলে সাধারণ অনেক সদস্যই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো এবং তখন গুণিতকি হিসেবে মনোনয়ন ফি-থেকে আয় বাড়তো বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
অবশ্য এই যুক্তিটিকে সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘খোঁড়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রথম বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়া নতুন এক প্রার্থী। ভোটে ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, সংগঠনে বর্তমানে এক হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন। কিন্তু মাত্র দুই হাজার টাকা নবায়ন ফি দিয়ে যারা ভোটার হননি তাদের কাছে সংগঠন কতটা এগুবে তা সহজেই অনুমেয়।
তিনি আরো বলেন, ২ হাজার টাকা নবায়ন ফি দিয়ে ৪২১ জন ভোটারের কাছ থেকে সংগঠনের বার্ষিক আয় হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকার মতো। অথচ সংগঠন পরিচালনায় অফিস ভাড়া ও বেতন মিলে প্রতি মাসেই কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠন পরিচালনার টাকা নেতাদের পকেট থেকেই আসছে বিষয়টা বেশ যৌক্তিক। কেননা ১১ জনের স্থানে যদি ১৮ জন প্রার্থী হতো তাতে সংগঠনের সামগ্রিক উন্নয়ন খুব একটা হতো না। অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল থাকলে কোনো সংগঠনই সামনে এগুতে পারে না। আমার মনে হয়, আগামীতে অন্যান্য সংগঠনও এই মডেলটি অনুসরণ করতে পারেন।