“সারা পৃথিবীতে এখন আর প্লেগ অথবা কলেরার সময়কালে নেই। এখন সারা পৃথিবীতেই মানুষের কাছে প্রযুক্তি আছে। এই প্রযুক্তিটা কেবল মাত্র আমাদের জীবনের চারপাশের অন্য কিছুতে না, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি একটি বড় প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই কারণেই সারা পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আমাদের স্বাস্থ্য গবেষকরা অবশ্যই আমাদের বেঁচে থাকার উপায়গুলো আবিষ্কার করবেন এবং এই কারণেই আমাদের আতঙ্কিত হওয়া কিছু নেই।”
মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এবং আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দক্ষতা উন্নয়নে ‘করোনা বিরোধী যুদ্ধ জয়ের কৌশল’ বিষয়ক ওয়েব সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার।
দেশে অনেক আবিষ্কার ও উদ্ভাবন হলেও আমরা জাতিগত ভাবে তা নিজেদের এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি নি। রেডিও আবিষ্কার থেকে শুরু করে বহু ঘটনা আছে যেখানে বাংলার মেধা কাজ করেছে।
করোনার সঙ্গে আমাদের লড়াই ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১.১৪ শতাংশ। সুস্থ হয়ে ওঠার হারও বেশি। এর কারণ বংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের বোধহয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আমরা যে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবেল করতে হয় ইউরোপ আমেরিকার মানুষকে জীবনে কল্পনাও করতে হয়নি। ফলে আমাদের নগরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষকে করোনা পরাজিত করতে পারবে বলে আমারা মনে হয় না।
আমরা দু-ধারা তলোয়ারের মাঝখানে পড়ে আছি। একদিকে করোনা অন্যদিকে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের উদ্ধার হওয়ার ঘটনা চ্যালেঞ্জিং।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) নতুন সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীরের সভাপতিত্বে অনলাইন এই দক্ষতা প্রশিক্ষণ সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম জিনরহস্য উন্মোচনকারী অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা এবং আইসিটি ইন্ডাস্টি স্কিলস কাউন্সিলের সিইও বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যুগ্ম সম্পাদক মুজাহিদ আল-বেরুনি সুজন।
মূল আলোচনায় কোয়ারেন্টিন এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা তুলে না নেয়ার মতো ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু সময়ের মতো একই ভুলে পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী। ব্যবসায়িক কাজে ভার্চুয়াল বৈঠক পরিচালনার পাশাপাশি মূলধনী ব্যয় ও নতুন বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দেন।
তবে এই বক্তার কথাটা ‘বাড়াবাড়ি’ উল্লেখ করে অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, বাতাসে করোনা ভাইরাস বাতাসে কয়েক মিনিট ভেসে বেড়ায়, তাপমাত্রা বাড়লেও কোপ কমেনি। এটা একটা জটিল অবস্থা। এই ধরনের মহামারি ১০০ বছর পর আসে। বাংলাদেশে অনেকগুলো সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। এখন এই বিষয়টি বিশ্ব দরবারে মর্যাদায় উঠে আসছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি ঔষধ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এর বেশিরাভাগই পুরোনো ওষুধ। তবে এখন প্লাজমা নিয়ে যে কাজ হচ্ছে এটা আশা জাগাচ্ছে।
কানাডার টরেন্টো থেকে এই আলোচনা সভায় অংশ নেন ড. সমীর কুমার সাহার স্ত্রী অনুজীববিজ্ঞানী ড. সেতারুন নাহার।
সভায় বিসিএস এর জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে শাফকাত হায়দার, এসএম ইকবাল, কামরুল ইসলাম, আব্দুল ফাত্তাহ, গৌতম সাহা এবং এসএম ইকবালসহ অন্যান্যরা করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রদান করেন।