স্মার্ট ইকোনোমির দিকে এগিয়ে যেতে বছরে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব দেশে নিয়ে আসছেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত বাক্কো’র সাড়ে প্রয়ায় ৪০০ সদস্য। ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’-এর দ্বাদশতম বার্ষিক সাধারণ সভায় এমনটাই জানিয়েছন সংগঠনের সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ।
সোমবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রবিবার (২৭ নভেম্বর, ২০২৩) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেছেন, “আমাদের ৩৬০+ সদস্য এখন বছরে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব দেশে নিয়ে আসছে, যার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে, আমরা স্মার্ট ইকোনোমির দিকে এগোচ্ছি।”
তিনি আরো জানান, বিদায়ী বছরে বাক্কো নতুন নতুন মাইলফলক অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর পাশাপাশি সাতটি বিভাগীয় পর্যায়েও বিপিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন আমাদের ডিজিটাল ইকোনোমি হাব নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এর মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সামগ্রিকভাবে আরও পরিণত হবে সংগঠনটি। এই অভিপ্রায় নিয়েই সদস্যদের আইডিয়া, মেধা, চিন্তা দিয়ে আমাদের এ কাজে শামিল হবার জন্য আহ্বান বাক্কো সভাপতি।
অনুষ্ঠানে বিগত ১১তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, চলতি বছরে বাক্কোর সকল কার্যক্রম, অগ্রগতির প্রতিবেদন, বিপিও শিল্পের উন্নয়নের নিমিত্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্য কার্যক্রম উপস্থাপন করেন বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন। এছাড়াও অর্থ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক উপস্থাপন করেন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। সদস্যদের সম্মতিক্রমে দুইটি প্রতিবেদনই অনুমোদিত বলে গৃহীত হয়।
এছাড়াও উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিপিও প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং প্রশিক্ষণ ল্যাবগুলোতে জরুরী অগ্নিনির্বাপণের সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তা; বিপিও কর্মীদের জন্য প্রফেশনাল আইডেন্টিটি তৈরি ও তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী নিশ্চিতকরণ; অটোমেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং মডেল-এর মত আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাব; সরকারি অংশীজনের সঙ্গে নীতিমালার সামঞ্জস্য তৈরির পরিকল্পনাসহ বিপিও শিল্পের নানামুখী বিষয় নিয়ে কথা বলেন বাক্কো সদস্যরা।
বাক্কো সদস্যদের মধ্য থেকে সিএমইডি হেলথের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. খন্দকার এ. মামুন, মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আলমাস কবীর, মেসার্স ফায়ার অ্যান্ড সেইফটি ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার ফয়সাল আহমেদ, এইচএমসি টেকনোলজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মৃধা মোহাম্মদ মাহফুজ-উল-হক, আয়েশা সার্ভিসেস লিমিটেড (এএসএল বিপিও)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জায়েদ উদ্দীন আহমেদ, এসেনশিয়াল ইনফোটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজ আহমেদ খান, ঢুলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা আফরীন ফাতিমা লুশা বিপিও শিল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
বক্তারা ১১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়ন এবং ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৩’-এর আয়োজনের মাধ্যমে বিপিও শিল্পের ভাবমর্যাদা উন্নয়নে বাক্কো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে মত দেন। পাশাপাশি সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো, গবেষণা ও উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিপিও শিল্পের বিনির্মাণে বাক্কোর অবদান আরও সুদূরপ্রসারী করার জন্য অনুরোধ জানান তারা।
বাক্কোর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বর্তমান সিনিয়র উপদেষ্টা আহমাদুল হক বলেন, “বাক্কোকে অভিনন্দন এতটা পথ অতিক্রম করে আসার জন্য, বারো বছরে এতগুলো মাইলফলক অর্জনের জন্য। মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান আর ৩০০ কর্মী নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আর এখন আমাদের বিপিও শিল্পে কর্মীর সংখ্যা ৭০,০০০। তবে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের বিপিও শিল্পের প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। পরিবর্তন আসছে। আমাদের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের কথা মাথায় রাখতে হবে সবার আগে। বিপিও কর্মীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরাপত্তা, দক্ষতা উন্নয়নে আপস্কিলিং-এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মীদের কদর করলেই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি মজবুত হবে।”
এরপর বক্তব্য রাখেন বাক্কো সহ-সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ তানজিরুল বাসার, পরিচালকবৃন্দ- একেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু, আবু দাউদ খান, মোঃ ফজলুল হক, ড. তানজিবা রহমান, কাওসার আহমেদ এবং মুসনাদ ই আহমেদ।
সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোঃ আবুল খায়ের। সব শেষে বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “সামনের বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালীভাবে আমাদের ছাপ রাখতে চাই। তাই সদস্যদের বলছি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণে আরও উদ্যমী হতে, বাক্কো আছে সুযোগ করিয়ে দেবার জন্য, আপনাদের পাশে। বাক্কোর আভ্যন্তরীণ আটটি সাবকমিটির কাজে সদস্যদের আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্যও অনুরোধ করছি। বিপিও শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নে আপনাদের মতামত আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়। কেননা আপনাদের মূল্যবান পরামর্শের ওপর ভিত্তি করেই আমরা বাক্কোর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার নকশা করি।”