দুই দিনে মোট ১৬টি শেসনে ১০টি দশের ৬৪ জন বক্তার অংশগ্রহণের মধ্যে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) শেষ হলো প্রথম ‘ডিপিআই অ্যান্ড এআই ফর জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বৈষম্যহীন ডিজিটাল বিশ্ব গড়ার আহ্বানে আগামীতে প্রতিবছর এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়ে রাজধানীর হোটেলে ইন্টারকনিনেন্টাল ঢাকার রূপসীবাংলা বলরুমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সমাপনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনে বিপ্লব এসেছে। শিক্ষাখাতে প্রযুক্তি প্রসারের মাধ্যমে আমরা স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করছি। গতানুগতিক শিক্ষাকার্যক্রম থেকে আধুনিক শিক্ষায় রূপান্তরিত হচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে ব্লেন্ডেড শিক্ষার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে আমরা সমৃদ্ধ শিক্ষা নিশ্চিতে পারসোনাইজড শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এরমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম এমনভাবে ডিজাইন করছি যাতে শিক্ষার্থীরা বর্তমানের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারেন। এছাড়া শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করবার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি নৈপুণ্য অ্যাপ উদ্বোধন করেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন রেকর্ড সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রতিবেদন তৈরি স্মার্ট ও সহজ করতে তৈরি করা হয়েছে নৈপুণ্য অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও পারদর্শিতার অবস্থা জানতে পারবেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
আগামীর সমৃদ্ধ শিক্ষা বাস্তবায়নে এআই প্রযুক্তির এর মাধ্যমে উদ্ভাবনী উদ্যোগ তৈরি করে স্মার্ট শিক্ষা নিশ্চিতে করতে বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছি। এছাড়া শিক্ষাখাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্মার্ট সল্যুশন উদ্ভাবনে জোর দিচ্ছি। দেশ ও বিশ্বব্যাপী স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বৈষম্যহীন ও টেকসই বিশ্ব গড়তে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করছি, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে আমরা স্মার্টার দেশ হিসেবে অবদান রাখতে পারবো।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সংশ্লিষ্টদের ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও বিকাশে অবদান রাখবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে ডিপিআই এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও বৈষম্যহীন ডিজিটাল বিশ্ব গড়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করছি। আমরা অর্জন করেছি কীভাবে এআই-কে জনসম্পৃক্ত করা যায় তার সর্বোত্তম অনুশীলন। আর তাই আমাদের অর্জন ও অভিজ্ঞতাকে শাণিত করতে প্রতি বছর ‘ডিপিআই অ্যান্ড এআই ফর জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’ আয়োজন করা হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের সমাপনী দিনে ই-কমার্স খাত, ফিনটেক, পাবলিক সার্ভিস ডিজিটাইজেশন, এডুটেক, স্বাস্থ্যসেবা, গ্রীন ইকোসিস্টেম উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সর্বোত্তম ব্যবহার বিষয়ক ৬টি সেশন/সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক স্মার্ট রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও টেকসই বিশ্ব গড়তে এআই কীভাবে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয় এসব সেশনে। সেশনগুলোতে আলোচকরা ডিজিটাল ইকোনমিতে এআইয়ের গুরুত্ব বিস্তারিত তুলে ধরেন। এছাড়া ওপেন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জুডিশিয়ারি, ফিনটেক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি শেয়ার, পলিসি, সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিক ও বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও ডিজিটাল বৈষম্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনে টেকসই আগামীর স্মার্ট বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহার, নীতি ও নৈতিকতা নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথম সেশনে দেশ ও বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স খাত সম্প্রসারণে এআই-ভিত্তিক স্মার্ট সল্যুশন তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় সেশনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার ক্ষেত্রে ফিনটেক খাতে এআই ব্যবহার করে কীভাবে বিপ্লব আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। তৃতীয় সেশনে স্মার্ট নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা পারসোনালাইজড সল্যুশন বের করা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনাকে আরও স্মার্ট করার ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করেন বক্তারা।
চতুর্থ সেশনে আগামীর সমৃদ্ধ শিক্ষা বাস্তবায়নে এআই প্রযুক্তির এর মাধ্যমে উদ্ভাবনী উদ্যোগ তৈরি করে স্মার্ট শিক্ষা নিশ্চিতে করা নিয়ে আলোচনা করা হয়। পঞ্চম সেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যহারের মাধ্যমে স্মার্ট ও টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাপনী দিনের শেষ সেশনে সবুজায়ন ও টেকসই বিশ্ব তৈরিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, বণ্টন এবং ভোগের নকশা উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
দুই-দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে সেক্টরভিত্তিক ১৪টি বিশেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা উক্ত সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্টাকচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। একই সাথে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী ডিপিআই ও এআই-এর সম্ভাবনা নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি খাতের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করার পাশাপাশি ডিজিটাল অভিগম্যতার সাথে ডিপিআই এর রূপান্তর, দায়িত্বশীল এআই-এর জন্য টেকনোলজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, ডাটা সিকিউরিটি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জিরো ডিজিটাল ডিভাইড এর জন্য বৈশ্বিক সমন্বয় এই সম্মেলনের লক্ষ্য। সম্মেলনে ডিপিআই ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।