স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ পুরো দেশের মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্ত করতে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) এর মতো একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম অবকাঠামো নির্মাণকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। আর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এরইমধ্যে বাংলাদেশ ডিপিআইয়ের তিন স্তর নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট ২০২৩ উপলক্ষ্যে রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সকাল থেকে শুরু হওয়া সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত দুই দিন ব্যাপী উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে এমনটাই জানিয়েছেন তারা।
এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে ডিপিআই কোনো স্বপ্ন নয়, বরং একে বাস্তবে রূপ দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জুডিশিয়ারিসহ সব খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্ত করা সহজ, পরিমাপযোগ্য ও টেকসই সমাধানগুলো দুর্বল ও প্রান্তিকদের উন্নয়নের গল্পে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে তুলবে।
ডিপিআই ও এআইয়ের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধ ও টেকসই উন্নয়নে সমূহ সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে আমরা ‘বটম আপ অ্যাপ্রোচে’ প্রান্তিক জনগণের জন্য ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছি। ৯ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে নাগরিক সেবা পৌঁছে দিয়েছি। এই সেন্টারগুলোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে বড় অংশ হচ্ছেন নারীরা। তাদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের ব্যবধান হ্রাস করে এবং নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর ভূমিকার জন্য সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক ডিজিটাল বিভাজনের ব্যাপারে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করার জন্য কাজ করছি।
এরইমধ্যে বাংলাদেশ ডিপিআইয়ের তিন স্তর নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এগুলো হলো- ডিজিটাল পরিচয়, ডিজিটাল পেমেন্ট ও ডেটা বিনিময়। দেশের ৯৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যাকে আওতাভুক্ত করেছে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা। জন্মনিবন্ধন আইডির মতো ইউনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বীকৃতির পাশাপাশি যাবতীয় সেবা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল পেমেন্ট জিটুপি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিন কোটি মানুষকে অর্থ সেবা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকার ডেটা সিস্টেম উন্নয়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে, যা সামাজিক নিরাপত্তা পেমেন্ট নিশ্চিত করছে এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি টেকসই স্যানিটেশন এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ‘প্রযুক্তি কেন মানুষের জন্য’ তা নিয়ে গুগল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ভিন্ট সার্ফ এবং পিপল-সেন্টার্ড ইন্টারনেট-এর চেয়ারম্যান মেই লিন ফাং এবং ইন্টারনেটে ইন্টারওপারেবল সফটওয়্যার লেয়ার গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা করেন ইনফোসিস লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানি। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডিপিআই এর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড এভস এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিপিআই এর সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
আনীর চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল স্পেসে লেগো ব্লক দিয়েই ডিপিআই এর অবকাঠামো তৈরি করা হয়। ডিপিআই এর রয়েছে ৫টি স্তর। এর নিচের লেয়ারে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে ফিনটেক। তৃতীয় স্তরটি ডেটা লেয়ার। চতুর্থটি সার্ভিস লেয়ার এবং পঞ্চম স্তরে থাকে ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশন স্তর। ডিজিআই কোনো একক দেশ বা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এখানে জাতিয়তার কোনো সীমানা থাকে না। কাজেই আজ এই সেমিনারে যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, উগাণ্ডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের ডিপিআই নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বেসিস জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি সামিরা জুবেরি হিমিকার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাম্বিয়ার ডিজিটাল ইকোনোমি অ্যান্ড কমিউনিকেশন মন্ত্রী ওসমান আবা, আইসিটি সচিব শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও এস্তোনিয়া থেকে ভার্চুয়ালি চুক্ত হয়ে মি. সিকুত, অ্যাথলেটিক সেমেডো মেডিরোস ও বাংলাদেশর পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সরকার ই-কোয়ালিটি ফান্ড গঠন করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা এআই ও ডিজিটালাইজেশনে সাউদার্ন ডেভেলপমেন্ট দেশগুলোতে আমাদের নাগরিক কেন্দ্রিক সেবা দেয়ার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগাতে চাই। একইসঙ্গে চাই আন্তর্জাতিক এআই গভর্নেন্স-এ যুক্ত হতে। ডিপিআই এর দক্ষতা এবং ইন্টারঅপারেবিলিটি নিয়ে আলোচনা করেন এস্তোনিয়া সরকারের সাবেক সরকারি সিআইও সিম সিকুট।
সম্মেলন উদ্বোধনের পরে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে এনে টেকসই বিশ্ব গড়তে এআই এর অবদান নিয়ে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগ এর অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের নেস্তা’র সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যার জিওফ মুলগান। আলোচনায় গাম্বিয়া, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় ডিজিটাল বৈষম্যহীন ও টেকসই বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।