অন্তর্ভূক্তিমূলক জনকেন্দ্রিক বৈষম্যহীন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে রাজধানীর রূপসী বাংলায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ডিপিআই ও এআই শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সোমবার সকালে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, বিচারব্যবস্থা, ফিনটেক, ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর আলোকপাত করা হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে আটটি সেশনের মধ্যে স্মার্ট রাষ্ট্র বিনির্মাণে ডিপিআই কীভাবে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে আলোচকরা ডিজিটাল ইকোনমিতে ডিপিআইয়ের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তি শেয়ার, পলিসি, সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিক ও বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেন।
দিনের শুরুতেই এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরির সঞ্চালনায় জনকেন্দ্রকি ডিপিআই মডেল নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বব্যাংকের আফ্রিকা অঞ্চলের ডিপিআই বিশেষজ্ঞ কলিন বাবিরু কারনু। এসময় তিনি ইউজি হাব গড়ে তুলতে ক্লাউডের ব্যবহার, প্রত্যেক নাগরিকের ডিজিটাল পরিচয় শনোক্সে ফেসিয়াল রিকগনিশন সহ কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ই-সিগনেচার, ই-লকার ব্যবস্থাপনারা একটি কাঠামো তুলে ধরেন। এ নিয়ে আলোচনা করেন ইউএনডিবি ব্যাংকক অঞ্চলের ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট মোহাম্মাদ আরফে এলাহি। আর স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার।
প্রথম সেশনে আন্তঃদেশীয় ই-কমার্স খাত সম্প্রসারণে ডিপিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চালডাল সহ প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলিম। স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক ছিলেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং ইওয়ার্ল্ডওয়াইড গ্রুপের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সালমা আব্বাসি।
দ্বিতীয় সেশনে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সাম্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ডিপিআই কীভাবে অবদান রেখে চলেছে এবং রাখবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। তৃতীয় সেশনের বিষয় ছিল ডিপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে নাগরিকদের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার উপায়।
ডিপিআইয়ের মাধ্যমে কীভাবে সমৃদ্ধ আগামীর শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয় চতুর্থ সেশনে। পঞ্চম সেশনে ডিজিটাল স্বাস্থ্য বাস্তবায়নে কী কী উদ্ভাবন হয়েছে এবং ডিপিআইয়ের মাধ্যমে স্মার্ট স্বাস্থ্য বাস্তবায়নে কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ষষ্ঠ সেশনে আলোচনার বিষয় ছিল টেকসই বিশ্ব গঠনে ডিপিআইয়ের ভূমিকা। এছাড়া সবুজায়ন ও টেকসই বিশ্ব তৈরিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, বণ্টন এবং ভোগের নকশা উন্নয়নে ডিপিআই কীভাবে অবদান রাখছে এবং রাখবে সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
সপ্তম সেশনে নারীর নেতৃত্ব দক্ষতা বাড়িয়ে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে ডিপিআই কীভাবে রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দিনের শেষ সেশনে ডিপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে এনে অন্তর্ভুক্তিকরণ অভিগম্যতা আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের সাইড ইভেন্টে ডিজিটাল বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহার করে ডিপিআই নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এর পটভূমিতে বৈশ্বিক গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।