আজ ১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে নকল বা ক্লোন করা মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিটি) যাচাই। তবে এই আইএমইআই যাচাইয়ের মাধ্যমে আজ থেকেই নকল মোবাইল ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। এ জন্য আরো সময় পাচ্ছেন ইতিমধ্যেই যাচাই ছাড়াই কিনে ফেলা মোবাইলফোন গ্রাহক।
বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান ডিজিবাংলা-কে বলেন, ১ আগস্ট থেকেই কোনো হ্যান্ডসেট বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত বা চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। মূলত আজ থেকে গ্রাহক সেট কেনার সময়ই যাচাই করে নিতে পারবেন, এটা আসল না নকল। নিবন্ধন এর কোনো বিষয় নেই।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) চালু করা হলে নকল/অবৈধ সেটের সাথে মোবাইল নেটওয়ার্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে সেবা দিতে পারবো।
এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কেউ ব্যক্তি পর্যায়ে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসলেও কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে জাকির হোসেন খান বলেন, এনইআইআর এর পর নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে সেটি নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে।
গত ২৯ জুলাই বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলো, আগামী ১ আগস্ট থেকে নকল বা ক্লোন আইএমইআই সম্বলিত মোবাইল হ্যান্ডসেট মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে পরবর্তী ন্যাশনাল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টি রেজিস্ট্রারের (এনইআইআর) মাধ্যমে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।
এ অবস্থায় মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট কেনার আগে সেটটির আইএমইআই’র সঠিকতা যাচাই করে কেনা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় রশিদ নেয়ার অনুরোধ করেছে বিটিআরসি।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কেনা এবং বিদেশ থেকে আনা গ্রাহকরা চিন্তায় পড়েছিলেন। বিটিআরসি সে উদ্বেগের বিষয়টিও পরিস্কার করে দিয়েছে। আর নকল মোবাইলফোন বন্ধ করতে তিন ধাপে কাজ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ জানিয়েছেন, আজ থেকে নেয়া প্রক্রিয়াটি মূলত তিনটি সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে আমদানি, চুরি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ করা যাবে, গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে, মোবাইল ফোনের হিসাব রাখা যাবে। সবশেষে সরকারি রাজস্বের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে। তিনি জানান মূলত তিনটি ধাপে এই প্রক্রিয়াটি শুরু করা হবে।
এরআগে অবৈধ আমদানি, চুরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রাজস্ব ক্ষতি ঠেকাতে যুড়পৎ পদক্ষেপ নেয় বিটিআরসি। মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টারের (ইআইআর) এবং আমদানী কারকদের জন্য জাতীয় ইআইআর (এনইআইআর)।
দেশের প্রতিটি মোবাইলফোন ব্যবহারকারীকে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। জানা গেছে বছরে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট নানা অসাধু উপায়ে সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাজারে চলে আসছে। এতে প্রতিবছর ৮শ থেকে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম ধাপে বাংলাদেশে যতোগুলো হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি হচ্ছে এবং স্থানীয়ভাবে যে মোবাইলগুলো অ্যাসেমব্লিং করা হচ্ছে বা উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর ১৫ ডিজিটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে একটি বৈধ ফোনের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে বিটিআরসি তাদের ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনা- ইআইআর তৈরি করবে। যার আওতায় দেশের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এরিমধ্যে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির ইআইআর যাচাই করে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২৪ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিটিআরসি। প্রতিবেদনটি যাচাইয়ের জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করবে যারা বিটিআরসির জন্য এই কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম বা কমন সার্ভার তৈরি করবে। যেখানে প্রত্যেকটি অপারেটরের ডাটাবেজগুলো সিঙ্ক্রোনাইজ হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সক্রিয় প্রতিটি হ্যান্ডসেট কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। তখন এর নাম হবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার- এনইআইআর। এতে ইআইআর এ নতুন কোন ডেটা সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা এনইআইআরে চলে আসবে। মূলত সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন ডাটাবেজের তথ্যের সঙ্গে এটি মিলিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি গ্লোবাল আইএমইআই ডাটাবেজের সঙ্গে হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর যাচাই করা হবে।
প্রসঙ্গত, মোবাইল ফোন ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এর অর্থায়নে এনএআইডি (এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। গত ২২ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।